বুধবার
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাষ্ট্রীয় শোকের মধ্যে বই বিতরণ

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:১৫ পিএম
খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
expand
খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান

জাতি যখন শোকে স্তব্ধ, ঠিক তখনই খুলনায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে বই সংগ্রহের নির্দেশনা ঘিরে তৈরি হয়েছে বিতর্ক ও ক্ষোভ। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার মৃত্যুতে বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) থেকে শুক্রবার (২ জানুয়ারি) পর্যন্ত তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক পালন শুরু হয়েছে। এই সময়েই খুলনা জেলা শিক্ষা অফিস থেকে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইমেইলের মাধ্যমে বই সংগ্রহের জন্য জানানো হয়। যা জনমনে প্রশ্ন ও অসন্তোষের জন্ম দিয়েছে।

মঙ্গলবার উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে সিদ্ধান্তের পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, রাষ্ট্রীয় শোক পালনকালে দেশের সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। একই সঙ্গে সরকারি ও বেসরকারি ভবনগুলোতে শোক পালন এবং ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনার আয়োজনের কথাও উল্লেখ করা হয়।

এই আবহে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বই বিতরণ কার্যক্রম অনেকের কাছেই সাংঘর্ষিক মনে হয়েছে। খুলনার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা জানান, রাষ্ট্রীয় শোক উপেক্ষা করে তাদের অফিসে আসতে বাধ্য করা হয়েছে। এক শিক্ষক বলেন, আমাদেরও মন আছে, আবেগ আছে। কিন্তু আমরা প্রকাশ করতে পারি না। এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে আমাদের একটি নির্দিষ্ট অবস্থানে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হয়েছে।

খুলনা সরকারি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জেলা শিক্ষা অফিসের সংরক্ষিত কক্ষ থেকে বুধবার সকালে বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কিছু বই সরবরাহ করা হয়। একটি স্কুলের পক্ষ থেকে বই নিতে আসা ইজিবাইক চালক মো. আক্তার হোসেন বলেন, আজ খুলনা শহর প্রায় ফাঁকা। বাজার পর্যন্ত খোলা নেই। একদিকে বেগম জিয়ার জানাজা হচ্ছে, আর অন্যদিকে বই দেওয়া হচ্ছে। জেলার সর্বোচ্চ শিক্ষা অফিস যদি এমন উদাহরণ দেয়, তাহলে সাধারণ মানুষ কী শিখবে?

আরও প্রশ্ন উঠেছে বই বিতরণের যৌক্তিকতা নিয়েও। বুধবার পর্যন্ত খুলনায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির সব বই পৌঁছায়নি। ফলে আনুষ্ঠানিক বই বিতরণ কার্যক্রমও শুরু হয়নি। এমন অবস্থায় কেন শিক্ষকদের ও কর্মীদের উপস্থিত থাকতে বাধ্য করা হলো। এই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে জনমনে।

জেলা শিক্ষা অফিসার এস. এম. ছায়েদুর রহমান জানান, ১ জানুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে বই বিতরণ হচ্ছে না। আমাদের কাছে এখনো প্রায় ৭০ শতাংশ বই এসেছে। সপ্তম শ্রেণির কোনো বই আসেনি, অনেক শ্রেণির বইও অসম্পূর্ণ।

রাষ্ট্রীয় শোকের সময় বই বিতরণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটিও জরূরী সেবার মধ্যে পড়ে। তাছাড়া আমরা কোনো উৎসব করছি না। আজ নগরীর ৫৪টি স্কুলে অষ্টম শ্রেণির কিছু বই দেওয়া হয়েছে।

তবুও প্রশ্ন থেকে যায়, রাষ্ট্রীয় শোকের সময়ে সরকারি বিধিনিষেধ ও সামাজিক আবেগের সঙ্গে প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের সমন্বয় কতটা প্রয়োজনীয় ছিল? শোক ও দায়িত্বের মাঝখানে এই ভারসাম্য রক্ষা করতে না পারাই কি জনমনে ক্ষোভের মূল কারণ। এমন প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন খুলনার মানুষ।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X