

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার পাশে ছায়ার মতো ছিলেন ফাতেমা বেগম। গৃহকর্মীর পরিচয়ে কাজ শুরু হলেও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি হয়ে ওঠেন খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে জীবনের শেষ সময় পর্যন্তও তিনি ছিলেন তার পাশে নিঃশব্দ, অবিচল।
কারাগারের সীমাবদ্ধ জীবন, গৃহবন্দিত্বের ক্লান্ত দিন, অসুস্থতার রাত কিংবা বিদেশ সফরের নীরব মুহূর্ত সবখানেই ফাতেমার উপস্থিতি ছিল অব্যাহত। কোনো রাজনৈতিক পরিচয় বা দলীয় পদ না থাকলেও দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের বহু সংবেদনশীল সময়ের নীরব সাক্ষী হয়ে আছেন তিনি।
ভোলার সদর উপজেলার কাচিয়া ইউনিয়নের শাহ-মাদার গ্রামে ফাতেমার জন্ম। বাবা রফিকুল ইসলাম ও মা মালেকা বেগমের পাঁচ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ। একই এলাকার কৃষক হারুন লাহাড়ির সঙ্গে সংসার শুরু করেন। তাদের ঘরে জন্ম নেয় এক কন্যা ও এক পুত্র। তবে ২০০৮ সালে স্বামীর আকস্মিক মৃত্যুতে জীবনের মোড় ঘুরে যায় ফাতেমার। তখন ছেলে মাত্র দুই বছরের শিশু। সন্তানদের নিয়ে তিনি আশ্রয় নেন বাবা-মায়ের বাড়িতে। সীমিত আয়ের সংসারে টিকে থাকতে সন্তানদের গ্রামে রেখে কাজের সন্ধানে ঢাকায় পাড়ি জমান।
২০০৯ সালে পূর্বপরিচিত এক ব্যক্তির সহায়তায় তিনি কাজ পান খালেদা জিয়ার বাসভবনে। সেখান থেকেই শুরু হয় দীর্ঘ সহচর্যের অধ্যায়। রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা একজন নেত্রীর দৈনন্দিন জীবনের নীরব অংশীদার হয়ে ওঠেন তিনি।
২০১৪ সালের ‘মার্চ ফর ডেমোক্রেসি’ কর্মসূচিকে ঘিরে প্রথমবারের মতো গণমাধ্যমের চোখে পড়েন ফাতেমা। গুলশানে খালেদা জিয়ার বাসভবনের সামনে পথরোধ করা হলে সাবেক প্রধানমন্ত্রী গাড়িতে উঠেও বের হতে পারেননি। সাংবাদিকদের সামনে কথা বলার সময় অসুস্থ শরীর সামলাতে কষ্ট হচ্ছিল। তখন পাশে দাঁড়িয়ে শক্ত করে ধরে রেখেছিলেন ফাতেমা। সেই দৃশ্য ক্যামেরায় ধরা পড়ার পরই তার নাম আলোচনায় আসে।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি আদালতের রায়ে খালেদা জিয়া কারাবন্দি হলে তার আইনজীবীরা আবেদন জানান, ব্যক্তিগত সেবার জন্য ফাতেমাকে যেন সঙ্গে থাকার অনুমতি দেওয়া হয়। আদালতের অনুমোদনে ছয় দিন পর তিনি কারাগারে প্রবেশ করেন। কোনো রাজনৈতিক দায় বা বাধ্যবাধকতা নয় নিজের ইচ্ছাতেই তিনি কারাবাস বেছে নেন, কারণ জানতেন, ওই সময়ে খালেদা জিয়ার একা থাকা মানে মানসিকভাবে ভেঙে পড়া।
একসময় রাজনৈতিক বক্তব্যে খালেদা জিয়াকে কটাক্ষ করে বলা হয়েছিল, কারাগারেও তার ফাতেমা প্রয়োজন হবে—সেই কথাই যেন বাস্তবে প্রতিফলিত হয়।
রাজনীতির ইতিহাসে সাধারণত উচ্চারিত হয় নেতাদের নাম, আন্দোলনের গল্প, ক্ষমতা আর কারাবাসের অধ্যায়। তবে এসব ঘটনার আড়ালে থেকে যান কিছু নীরব মানুষ, যাদের অবদান লেখা থাকে না শিরোনামে। খালেদা জিয়ার জীবনে এমনই এক নীরব ছায়াসঙ্গীর নাম ফাতেমা বেগম।
মন্তব্য করুন

