মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

গুলিবিদ্ধ মোতালেব শঙ্কামুক্ত, ভাড়াটে নারী তন্বী লাপাত্তা

খুলনা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৫:৪৯ পিএম
এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ ঘটনাস্থলে মিলেছে মাদক ও নারীর আলামত
expand
এনসিপি নেতা গুলিবিদ্ধ ঘটনাস্থলে মিলেছে মাদক ও নারীর আলামত

এনসিপি'র সহযোগী সংগঠন শ্রমিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় আহবায়ক মোতালেব শিকদার তন্নি নামে এক মেয়ের নেওয়া ভাড়া বাসায় প্রায় সময়ই আসা যাওয়া করতো। মোতালেব ছাড়াও সেই বাসায় যাতায়াত ছিলো অনেকের।

প্রথমে খুজে পাওয়া যাচ্ছিলো না মোতালেবকে গুলি করার স্থান। পরে রাস্তা থেকে রক্তের ফোটা ধরে সোনাডাঙ্গার আল আকসা মসজিদ গলিতে অবস্থিত মুক্তা হাউজ নামের একটি ভবনে প্রবেশ করে পুলিশ। নিচতলার তালাবদ্ধ ফ্লাটে ঢুকেই পাওয়া যায় সব আলামত।

সেখানে বিভিন্ন জায়গায় ছিলো রক্তের ফোটা। একটি গুলির খোসাও উদ্ধার করা হয়েছে। পুলিশ ও স্থানীয়রা জানিয়েছে, এই বাসায় সব অনৈতিক কার্যক্রম ও মাদক সেবন করা হতো। বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ইয়াবা সেবনের নানা সরঞ্জাম ও বিদেশী মদের বোতল। রাতভর একসাথে থাকার পর নিজেদের মধ্যে বিবাধের জেরে সকালে গুলি করা হয় মোতালেবকে। তারপর মোতালেব নিজেই পায়ে হেটে সেই বাসা থেকে বের হয়। ছুটে যায় হাসপাতালের দিকে। এঘটনায় মোতালেবের কান ঘেষে গুলিটি যাওয়ায় তার তেমন কোনো সমস্যা হয়নি। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে খুমেক হাসপাতালের সার্জারী ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়েছে। এদিকে সেই বাসায় থাকা তার সহযোগীরা এ ঘটনার পরে তালা মেরে বের হয়ে যায়। পুলিশ তাদের খোজাখুজি জারি রেখেছে। পুলিশ বলেছে, চাঁদার টাকা ভাগাভাগি নিয়েই এই গুলি করা হয়।

সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল আকসা মসজিদ স্মরণীর ১০৯ নম্বর রোডের মুক্তা হাউজের নিচতলায় এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় নাগরিক শক্তির খুলনা বিভাগীয় আহ্বায়ক মো. মোতালেব শিকদারকে গুলি করা হয়। গতকাল রোববার রাতে তিনি তিনতলা ওই ভবনের নিচতলার একটি কক্ষে অবস্থান করছিলেন।

পুলিশের একাধিক সূত্র জানায়, রাতে সেখানে মোতালেব শিকদারের সহযোগীরা ইয়াবা সেবন, মদ্যপানসহ অসামাজিক কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন। নিজেদের মধ্যে মতবিরোধের জেরে সহযোগীদের কেউ একজন তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে গুলি করে। গুলিবিদ্ধ অবস্থায় তিনি রিকশাযোগে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যান। ঘটনার পর থেকে ওই ফ্ল্যাটের ভাড়াটে তন্বীর সন্ধান পাওয়া যাচ্ছে না।

কেএমপির উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, সকালে আমরা তথ্য পাই- এনসিপির একজন গাজী মেডিকেলের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। সত্যতা যাচাইয়ের জন্য ঘটনাস্থলে যাই। শুরুতে ঘটনাস্থল ও সাক্ষী পাওয়া যাচ্ছিল না। পরে এনসিপির ভিকটিমের প্রাইভেট কার পড়ে থাকতে দেখে সন্দেহ হয়। লাজফার্মা থেকে একটি ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করি। এতে দেখা যায়, রাত সাড়ে ১২টার দিকে ভিকটিমসহ আরও দুইজন সেখানে আসে এবং কোথাও অবস্থান করে। ওই সূত্র ধরে মুক্তা হাউজে আসি। ওই কক্ষ থেকে মাদকের বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়। প্রাথমিক তদন্তে পাওয়া গেছে, তারা এখানে অসামাজিক কার্যকলাপে জড়িত ছিল এবং নিজেদের মধ্যে কোন্দলের কারণেই গুলির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় আরও অনেকে জড়িত। মোতালেবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বাকিদের নাম জানা যাবে। জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। গুলিটি তার মাথার ভেতরে ঢোকেনি, চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে গেছে। মোতালেব এখন শঙ্কামুক্ত।

মজিদ স্মরণীর মুক্তা হাউজের মালিকের স্ত্রী আশরাফুন্নাহার বলেন, স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে তন্বী নামে এক তরুণী এক মাস আগে নিচতলার ফ্ল্যাটটি ভাড়া নেয়। তিনি নিজেকে এনজিওকর্মী হিসেবে পরিচয় দিতেন এবং প্রায়ই বাড়ির বাইরে থাকতেন। তার কক্ষে একাধিক পুরুষের আসা-যাওয়া ছিল। পরে অন্যদের মাধ্যমে তার অসামাজিক কার্যকলাপের বিষয়টি জানতে পেরে এ মাসে বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হয়। তবে ছাড়ার আগেই এ ঘটনা ঘটে।

এদিকে ছেলের গুলিবিদ্ধ হওয়ার খবর পেয়ে হাসপাতালে ছুটে যান মোতালেবের মা রাবেয়া বেগম, স্ত্রী ফাহিমা আক্তার ও তিন বছরের কন্যা। তারা জানান, গতকাল রবিবার সন্ধ্যায় মোতালেবের সঙ্গে সর্বশেষ মোবাইলে কথা হয়। তখন তিনি জানান, খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাদের একজন কর্মী আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তার খোঁজ নিতে সেখানে আছেন। এরপর ডাকবাংলো মোড়ে স্যান্ডেল কিনতে যাবেন- এ কথা বলে ফোন কেটে দেন। রাতে আর যোগাযোগ হয়নি। রাত ১১টার দিকে ফোন পেয়ে জানতে পারেন তাকে গুলি করা হয়েছে। তারা দাবি করেন, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগ দেওয়ার কারণে প্রতিপক্ষ তাকে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে।

এনসিপি খুলনা মহানগর সংগঠক হামিম রাহাত বলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকায় মোতালেব শিকদার গুলিবিদ্ধ হন। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, খুলনা সন্ত্রাসীদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে নগরীতে অহরহ গোলাগুলির ঘটনা ঘটছে। এসব সন্ত্রাসী গ্রুপ রাজনৈতিক মদদে সক্রিয়। অবিলম্বে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার হারুন অর রশিদ খুলনা গেজেটকে বলেন, গুলিটি তার বাম কানের চামড়া ভেদ করে বের হয়ে গেছে। খুলনা সিটি ইমেজিং সেন্টারে তার মাথার স্ক্যান করা হয়েছে, সেখানে গুলির কোনো অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। আহত মোতালেব মিয়া এখন শঙ্কামুক্ত।

একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গুলিবিদ্ধ মোতালেব আগে শ্রমিক লীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। সরকার পরিবর্তনের পর তিনি এনসিপির শ্রমিক সংগঠন জাতীয় শ্রমিক শক্তির সঙ্গে যুক্ত হন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X