

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের ৪১ নম্বর ওয়ার্ডের পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বার্ষিক পরীক্ষা চলাকালীন রাতভর বাউলগান প্রশাসন কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলেও তার প্রস্তুতি চলছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে মাঠে মঞ্চ নির্মাণ, মাটি সমতলকরণ ও স্টেজ-গেট স্থাপনের প্রস্তুতি দৃশ্যমান হয়েছে।
পরে খবর পেয়ে পূবাইল থানা পুলিশ দেশের সার্বিক অবস্থা ও শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষার কথা সামনে রেখে নিষেধাজ্ঞা ও মঞ্চের কাজ বন্ধ করে দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ওই স্কুলমাঠে।
পাশাপাশি বাউলগানের পক্ষে একটি মহল জোর তদবির চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পূবাইল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে বাউল গানের প্রস্তুতি দেখে অনেকে প্রশ্ন তুলছেন কীভাবে ও কার খুঁটির জোরে সমাজবিরোধী কাজ চলছে এই সময়ে।
এ ঘটনায় শিক্ষার্থী, অভিভাবক, শিক্ষক, সামাজিক সংগঠন, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও সচেতন স্থানীয়দের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ, হতাশা ও প্রতিবাদ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা প্রতিবাদ জানিয়ে বলছেন—শিক্ষা, পরিবেশ, আইনশৃঙ্খলা ও সংবেদনশীল রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে নিষিদ্ধ ঘোষণা সত্ত্বেও পূবাইলে বাউলগানের মঞ্চ প্রস্তুতি চলছে কীভাবে? তবে প্রশাসন কার্যকর ভূমিকায় স্থগিতের আদেশকে সাধুবাদ জানিয়েছে এলাকাবাসী।
অন্যদিকে বাউলগান কমিটির পক্ষ থেকে স্থানীয়দের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে, অনুষ্ঠানে গাজীপুর–৫ আসনের সংসদ সদস্য প্রার্থী ও জেলা বিএনপির সভাপতি একেএম ফজলুল হক মিলনকে প্রধান অতিথি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে, সুতরাং অনুষ্ঠান বন্ধ করার মতো কোনো শক্তি নেই। এই বিতর্কিত বক্তব্য জনমনে আরও উত্তেজনা, প্রশ্ন ও ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে।
ক্ষোভ প্রকাশ করে এলাকাবাসী প্রশ্ন তুলেছেন, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও প্রস্তুতি চলছে কার ইঙ্গিতে? আর দ্রুত তদন্ত করে আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সচেতন নাগরিকেরা বলছেন, জনপ্রশাসন, শিক্ষা, স্বার্থ, নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা পরিবেশ বিষয়ে নিয়ন্ত্রণ ও নিষেধাজ্ঞা জারি আছে। এখন দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নিয়ে প্রস্তুতি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকে গেট ও মঞ্চ নির্মাণ শুরু হয়েছে। আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে তালিকাভুক্ত আ'লীগ নেতা ও যুবলীগ নেতার নাম রয়েছে। এই কর্মযজ্ঞ বন্ধে জোর দাবি জানাচ্ছে সাধারণ জনতা।
গত সোমবার শেখ হাসিনার ফাঁসির আদেশে দেশ যখন উত্তাল ও শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা, ঠিক তখনই বাউলগানের আয়োজন—এটা মেনে নিতে পারছে না এলাকাবাসী।
এলাকাবাসী ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, পরীক্ষার সময় রাতভর সাউন্ড সিস্টেমে অনুষ্ঠান আয়োজন শিক্ষাবিরোধী, পরিবেশবিরোধী ও সামাজিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকি। প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা মানা বাধ্যতামূলক, ইচ্ছার ব্যাপার নয়।প্রশাসনের ঘোষণা আবারও দৃঢ়ভাবে স্মরণ করিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কমিশনার জাহিদুল হাসান বলেন, পরীক্ষার স্বার্থে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ও দেশের সংবেদনশীল রাজনৈতিক সময়কে সামনে রেখে রাতভর বাউলগান, ডিজে, মাইক, সাউন্ড–সিস্টেম বা শব্দদূষণকারী কোনো আয়োজন অনুমোদিত নয়। কেউ আদেশ অমান্য করলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পূবাইল থানার ওসি মোল্লা মো. খালিদ হোসেন বলেন, শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ আমাদের অগ্রাধিকার। অননুমোদিত কোনো আয়োজন হলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
নাগরিকদের সতর্ক বার্তা শিক্ষার্থী, শিক্ষক, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ব্যবসায়ী, সুশীল সমাজ, প্রবীণ, তরুণ ও গৃহিণীদের কণ্ঠে একটাই দাবি, শিক্ষা পরিবেশের সাথে কোনো আপস নয়, সময়, স্থান ও পরিস্থিতি বিবেচনা করেই সংস্কৃতি। ফেসবুক, সমাবেশ, সামাজিক মিটিং ও অভিভাবক গ্রুপে একই সুর, শিক্ষা আগে, বিনোদন পরে, প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত অমান্য করলে দায় কার?
দেশের সংবেদনশীল সময়, পরীক্ষার সংকটকাল, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের স্বার্থ ও প্রশাসনের আদেশ, এসবই এক কথায় অপরিবর্তনীয় ও সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার। যে কোনো আয়োজনের মূল শর্ত, সময়, স্থান, অনুমতি ও জনস্বার্থ। পরীক্ষার সময় বিনোদন নয়, ভবিষ্যৎই প্রথম সিদ্ধান্ত।
মন্তব্য করুন