

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


একসময় বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস ও দেশের ঐতিহ্যের প্রতীক ‘সোনালী আঁশ’ পাট এখন বিলুপ্তির পথে। একসময় যেটি গ্রামীণ অর্থনীতি ও সংস্কৃতির অংশ হয়ে উঠেছিল, সেটি এখন কেবল স্মৃতির পাতায় স্থান পাচ্ছে।
এককালে দেশের সর্বত্র পাট চাষ হলেও, বর্তমানে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়া, ন্যায্যমূল্যের অভাব, শ্রমিক সংকট, উন্নত মানের বীজের ঘাটতি ও অনুকূল আবহাওয়ার অভাবে কৃষকরা ধীরে ধীরে পাট থেকে সরে যাচ্ছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, এখন এক বিঘা জমিতে পাট উৎপাদনে খরচ হচ্ছে প্রায় ১০-১২ হাজার টাকা, কিন্তু বাজারে বিক্রি করে সেই টাকা ওঠানোই কষ্টকর। লাভ তো দূরের কথা, মূল খরচও অনেক সময় ফিরে আসে না। এই সুযোগে কিছু ব্যবসায়ী কম দামে পাট কিনে মজুদ করেন, ফলে কৃষকরা প্রতি মৌসুমে লোকসানের মুখ দেখেন।
ধাপেরহাটের কৃষক রোস্তম খাঁন ও রাজু মিয়া জানান, “এক বিঘা জমির উৎপাদন খরচই বাজার থেকে তোলা যায় না, লাভ তো দূরের কথা।”
পাশাপাশি আবহাওয়ার অনিয়মিত বৃষ্টি, ভালো বীজের সংকট, পাট পঁচানোর জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না পাওয়া এবং শ্রমিক সংকটের কারণে উৎপাদনও কমছে। অন্যদিকে, শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধি কৃষকের ব্যয় আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
কামারপাড়ার কৃষক বিষু দাস বলেন, “দেশে পাটের দাম নেই। প্লাস্টিক ও সিনথেটিক পণ্যের সহজলভ্যতা পাটের বাজার ধসিয়ে দিয়েছে, রপ্তানিও আর আগের মতো নেই।”
ফলে অনেকে অন্য ফসলে ঝুঁকছেন। গ্রামীণ খাল-বিল বা পুকুরে পাট পঁচানোর দৃশ্য এখন প্রায় বিরল হয়ে পড়েছে।
কৃষি বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষককে পাটে ফিরিয়ে আনতে হলে সরকারি ক্রয় কর্মসূচি শক্তিশালী করতে হবে, ভালো মানের বীজ ও আধুনিক প্রযুক্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বহুমুখী পাটজাত পণ্যের চাহিদা তৈরি করতে হবে।
সাদুল্লাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অপূর্ব ভট্টাচার্য বলেন, “এ বছর উপজেলায় প্রায় ৬০০ হেক্টর জমিতে পাট চাষ হয়েছে। পাট আমাদের ঐতিহ্যের অংশ। কৃষককে ন্যায্যমূল্য ও গবেষণালব্ধ প্রযুক্তি সরবরাহ করতে পারলে তারা আবারও পাটচাষে আগ্রহী হবে।”
মন্তব্য করুন
