মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
২৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ৮ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এনসিপি নেতা গ্রেফতারে অনিয়ম: ওসির বিরুদ্ধে আইন লঙ্ঘনের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:২৬ পিএম
ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিম
expand
ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিম

ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারার ব্যত্যয়ে গ্রেফতারের অভিযোগে কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ আবুল হাসিমকে স্বশরীরে আদালতে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে হাজতি আসামি মো. সাজ্জাদ মিয়া ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নেতা মুরাদ আহম্মেদকে জামিন মঞ্জুর করা হয়েছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জ জেলা জজ আদালতের কোর্ট ইন্সপেক্টর মো. শামসুল আলম সিদ্দিকী।

রবিবার (২১ ডিসেম্বর) কিশোরগঞ্জ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলি আদালত-৪ এর বিচারক আমিনুল ইসলাম বুলবুল বিশেষ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন। আদেশে আগামী ২৩ ডিসেম্বরের মধ্যে ইটনা থানার ওসিকে আদালতে উপস্থিত হয়ে তার কর্মকাণ্ডের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাজির হতে ব্যর্থ হলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়।

আদালত আদেশে উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালে সংশোধিত ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা অনুযায়ী সাত বছরের অধিক সাজাযোগ্য অপরাধে কাউকে গ্রেফতার করতে হলে পুলিশের হাতে অবশ্যই বিশ্বাসযোগ্য তথ্য থাকতে হবে। কেবলমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে কাউকে গ্রেফতার করা আইনসম্মত নয়। মামলার নথি পর্যালোচনায় আদালত দেখতে পান, ইটনা থানার ওসি বিস্ফোরক দ্রব্য আইন, ১৯০৮-এর ৩ ধারায়—যার শাস্তি সাত বছরের অধিক—শুধুমাত্র সন্দেহের ভিত্তিতে আসামিদের গ্রেফতার দেখিয়েছেন। অথচ গ্রেফতারের পক্ষে কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য বা যাচাই-বাছাইয়ের প্রমাণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়নি।

আদালত বলেন, যুক্তিসঙ্গত সন্দেহ’ ও ‘বিশ্বাসযোগ্য তথ্য’-এর মধ্যে মৌলিক পার্থক্য রয়েছে। সাত বছরের অধিক সাজাযোগ্য অপরাধে কেবল সন্দেহের ভিত্তিতে গ্রেফতার ফৌজদারি কার্যবিধির সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। এতে পুলিশ আইন, ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারা এবং ৬৭(ক) ধারার লঙ্ঘন ঘটেছে।

আদালত আরও মন্তব্য করেন, যাচাই-বাছাই ছাড়াই রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে আন্দোলনকারীদের নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্য হিসেবে ফাঁসানোর চেষ্টা একটি গুরুতর বিষয়। যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা দিতে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাকে আইনগত পরিণতি ভোগ করতে হতে পারে।

শুনানিতে আসামিপক্ষের আইনজীবী শেখ আবু নায়েম ও জসীম উদ্দিন বলেন, মুরাদ আহম্মেদ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণকারী এবং এনসিপির অনুমোদিত সমন্বয় কমিটির সদস্য। তার পক্ষে দাখিলকৃত নথিতে প্রমাণ পাওয়া যায়, তিনি নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগের কোনো কমিটির সদস্য নন এবং কোনো ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডেও জড়িত নন। অপর আসামি মো. সাজ্জাদ মিয়ার পরিবারও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে সক্রিয় ছিল। তার কন্যা অর্পিতা সুমাইয়া সুলতানা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন—এ মর্মে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র আদালতে দাখিল করা হয়। তা সত্ত্বেও কোনো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য ছাড়াই তাকে নিষিদ্ধ সংগঠনের কর্মী হিসেবে সন্দেহভাজন দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেন আইনজীবীরা।

জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ইটনা উপজেলা শাখার সমন্বয় কমিটির যুগ্ম সমন্বয়কারী আফজাল হোসাইন শান্ত বলেন, “মুরাদ আহম্মেদ উপজেলা এনসিপির সমন্বয় কমিটির সদস্য। প্রথমে তাকে পারিবারিক বিরোধের বিষয় দেখিয়ে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি কখনো আওয়ামী লীগের কোনো পদে ছিলেন না।

কিশোরগঞ্জ জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক আহ্বায়ক ইকরাম হোসেন বলেন, অন্য কোনো দলের প্রভাবে পুলিশ এই কাজ করেছে। মুরাদ আহম্মেদ জুলাই-আগস্ট আন্দোলন সংক্রান্ত কোনো মামলার আসামি নন। এটি সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

ইটনা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ আবুল হাসিম বলেন, অভিযুক্ত মুরাদ আহম্মেদ যুবলীগের নেতা ছিলেন। পরবর্তীতে নিজেকে রক্ষার জন্য ২০২৫ সালে এনসিপিতে যোগ দিয়েছেন। এলাকায় তিনি যুবলীগ নেতা হিসেবেই পরিচিত। আদালতে হাজিরার বিষয়ে এখনো কোনো কাগজ পাইনি। পেলে আইনগতভাবেই মোকাবিলা করব।

উল্লেখ্য, মুরাদ আহম্মেদ (৩৮) কে গত ১৮ ডিসেম্বর রাতে ইটনা পুরাতন বাজার এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পুলিশ প্রতিবেদনে বলা হয়, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় একটি মিছিলে হামলার ঘটনায় তিনি ও তার সহযোগীরা অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে অংশ নিয়েছিলেন।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X