

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বিদেশে পড়াশোনার স্বপ্নপূরণে বড় বাধা হয়ে উঠছে ইউরোপ ও আমেরিকার কড়াকড়ি ভিসা নীতি। আর্থিক প্রমাণ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ঠিক থাকলেও বহু আবেদন সম্প্রতি বাতিল হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ তুলনামূলক সহজ প্রক্রিয়ার কারণে নতুন বিকল্প হিসেবে গুরুত্ব পাচ্ছে।
জার্মানিসহ শীর্ষ গন্তব্যগুলোতে অ্যাপয়েন্টমেন্ট পেতে ১.৫ থেকে ২.৭ বছর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হচ্ছে। ২০২৪ সালে শেনজেন অঞ্চলে ২১ হাজারের বেশি বাংলাদেশির ভিসা আবেদন নাকচ হয়েছে, যার মধ্যে শিক্ষার্থী ভিসাও আছে। তবে ফ্রান্স, পোল্যান্ড বা হাঙ্গেরির মতো কিছু দেশে প্রক্রিয়া তুলনামূলক সহজ।
এফ-১ স্টুডেন্ট ভিসার ক্ষেত্রে বছরে ৩৫–৫০ হাজার মার্কিন ডলার সমপরিমাণ আর্থিক সক্ষমতার প্রমাণ এবং কঠোর ইন্টারভিউর কারণে ২০২৪ সালে প্রায় ২৫–৩০ শতাংশ আবেদন প্রত্যাখ্যাত হয়েছে।
২০২৫ সালে কানাডা স্টাডি পারমিটের সংখ্যা ৩ লাখ ৬০ হাজারে সীমাবদ্ধ করেছে, যা আগের তুলনায় প্রায় ১০ শতাংশ কম। তবু স্কলারশিপধারীরা এখনো সুবিধা পাচ্ছেন।
প্রতিবছর ৩৫–৫০ হাজারের মতো বাংলাদেশি শিক্ষার্থী বিদেশে পড়তে যান। নতুন নীতির ফলে ২০২৫ সালের ইনটেকে অনেকে ভর্তি সুযোগ হারাচ্ছেন, যা ক্যারিয়ার পরিকল্পনায় বড় প্রভাব ফেলছে।
সহজ ভিসা ও সাশ্রয়ী শিক্ষার দেশগুলো
নিচে কয়েকটি দেশ তুলে ধরা হলো, যেগুলো ভিসা প্রক্রিয়ার দিক থেকে তুলনামূলক সহনশীল এবং উচ্চশিক্ষার জন্য ক্রমশ জনপ্রিয় হচ্ছে।
চীন
ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ, কম টিউশন ফি এবং দ্রুত ভিসা অনুমোদনের কারণে চীন শিক্ষার্থীদের কাছে শীর্ষে। বার্ষিক টিউশন ফি ৩–৭ হাজার মার্কিন ডলার এবং বসবাসের খরচ ৪–৬ হাজার ডলারের মধ্যে। ভিসা পেতে সময় লাগে প্রায় ৪–৬ সপ্তাহ এবং অনুমোদনের হার ৯০ শতাংশের বেশি। মেডিসিন (এমবিবিএস), ইঞ্জিনিয়ারিং ও বিজনেস এখানে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয়।
রাশিয়া
টিউশন ফি তুলনামূলক কম এবং ভিসা প্রক্রিয়া সহজ। মেডিকেল ও ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার জন্য ওপেন ডোরস স্কলারশিপের সুযোগ আছে। ইংরেজি মাধ্যমে পড়ার ব্যবস্থা থাকলেও ভাষা ও আবহাওয়ার সঙ্গে মানিয়ে নিতে কিছুটা সময় লাগে। পড়া শেষে ৬ মাস থেকে ১ বছরের পোস্ট–স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা মেলে।
তুরস্ক
তুরস্কের বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে রয়েছে বুরসলারি নামের ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ, যা টিউশন ফি, থাকার খরচ ও মাসিক স্টাইপেন্ড পর্যন্ত কভার করে। টিউশন ফি বছরে ৩–৮ হাজার ডলার এবং লিভিং কস্ট তুলনামূলক কম। পড়াশোনার পাশাপাশি সপ্তাহে ২০ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজের সুযোগ আছে।
মালয়েশিয়া
সাশ্রয়ী খরচ, মুসলিম-বান্ধব পরিবেশ এবং অনলাইন আবেদন প্রক্রিয়ার জন্য মালয়েশিয়া বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের অন্যতম পছন্দ। টিউশন ফি বছরে ৩–৮ হাজার ডলার, থাকার খরচ ৪–৬ হাজার ডলার। আইইএলটিএস স্কোর ৫.৫–৬.০ থাকলেই যথেষ্ট। পড়া শেষে এক বছরের পোস্ট–স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা মেলে।
সিঙ্গাপুর
দক্ষিণ এশিয়ার কাছাকাছি অবস্থান, বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয় এবং দ্রুত ভিসা প্রক্রিয়ার কারণে সিঙ্গাপুরও আকর্ষণীয়। টিউশন ফি বছরে ১৫–২৫ হাজার সিঙ্গাপুরিয়ান ডলার এবং লিভিং কস্ট ৮–১২ হাজার। ২–৪ সপ্তাহের মধ্যেই ভিসা পাওয়া যায়।
জাপান
প্রযুক্তি ও ইঞ্জিনিয়ারিং পড়াশোনার জন্য জাপান জনপ্রিয়। এখানে ফুল ফান্ডেড স্কলারশিপ এবং পার্ট-টাইম জবের (সপ্তাহে ২৮ ঘণ্টা) সুযোগ আছে। টিউশন ফি ৫–১০ হাজার ডলার, বছরে থাকার খরচ ৭–১০ হাজার ডলার। ভিসা পেতে সময় লাগে ১–২ মাস।
কানাডা
সীমা আরোপের পরও কানাডা শিক্ষার্থীদের কাছে শীর্ষ গন্তব্য। বছরে টিউশন ফি ১৫–৩০ হাজার কানাডীয় ডলার এবং লিভিং কস্ট ১০–১৫ হাজার ডলার। পড়াশোনা শেষে ১–৩ বছরের পোস্ট–গ্র্যাজুয়েশন ওয়ার্ক পারমিট এবং পরবর্তী সময়ে স্থায়ী বসবাসের (পিআর) সুযোগ আছে।
অস্ট্রেলিয়া
উদার অভিবাসন নীতি ও ২–৪ বছরের পোস্ট–স্টাডি ওয়ার্ক ভিসার কারণে অস্ট্রেলিয়া জনপ্রিয়। টিউশন ফি বছরে ২০–৪০ হাজার অস্ট্রেলীয় ডলার এবং লিভিং কস্ট ১২–১৮ হাজার ডলার। ভিসা প্রক্রিয়ায় সময় লাগে ৪–৬ সপ্তাহ।
মধ্যপ্রাচ্য
সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, সৌদি আরবের মতো দেশে অনেক আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা রয়েছে। সৌদির বিশ্ববিদ্যালয়গুলো স্কলারশিপ ও গবেষণার সুযোগ দেয়। ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা সম্ভব, আরবি শেখা বাধ্যতামূলক নয়। ভিসা প্রক্রিয়া সহজ এবং পড়া শেষে ১–২ বছরের পোস্ট–স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা পাওয়া যায়।
পরামর্শ
ইউরোপ ও আমেরিকার কঠোর নীতির কারণে কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, চীন, রাশিয়া, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, জাপান ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে আবেদন করা এখন সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত হতে পারে।
শিক্ষার্থীদের উচিত যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্কলারশিপ, অ্যাডমিশন ও ভিসা প্রক্রিয়ার প্রস্তুতি নেওয়া। প্রতিটি দেশের সরকারি ওয়েবসাইট ও বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল পোর্টাল ঘেঁটে তথ্য সংগ্রহ করলে প্রতারকের ঝুঁকি কমবে এবং সুযোগও বাড়বে।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
 
 
                    