

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দুই বছরের ভয়াবহ সংঘাত, মৃত্যু ও ধ্বংসের পর গাজায় উচ্চারিত হলো নতুন জীবনের শপথ। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর) মধ্য গাজার ধূলিসাৎ ভবনের পাশ দিয়ে শোভাযাত্রা করে হেঁটে গেলেন ৫৪ নবদম্পতি। একই রকম ঐতিহ্যবাহী পোশাকে সজ্জিত যুগলরা হাত ধরে নতুন পথচলার অঙ্গীকার করেন— যা যুদ্ধবিধ্বস্ত মানুষের অদম্য সহনশীলতার শক্তিশালী প্রতীক। খবর— দ্য টাইমস অব ইসরায়েল।
এই ৫৪ যুগলের মধ্যে ছিলেন ২৭ বছর বয়সী ইমান হাসান লাওয়া ও হিকমত লাওয়া। দূর সম্পর্কের আত্মীয় এই দুজন প্রতিকূলতার মাঝেও বিয়ের সিদ্ধান্ত নেন। হিকমত বলেন, “যা-ই ঘটুক, আমরা নতুন জীবন শুরু করব। সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছায় আশা করি—এই যুদ্ধ শেষ হবে।”
যুদ্ধবিরতির পর ফিলিস্তিনি ঐতিহ্যগত বিয়ের অনুষ্ঠান আবারও শুরু হলেও গাজার ভয়াবহ সংকটের কারণে উদযাপন ছিল অনেকটাই নিস্তেজ। ইমান-হিকমতসহ গাজার বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাস্তুচ্যুত। নিকটবর্তী দেইর আল-বালায় আশ্রয় নেওয়া নতুন দম্পতিও খাদ্য, পানি ও আশ্রয়ের মতো মৌলিক প্রয়োজন মেটাতেই হিমশিম খাচ্ছেন।
হিকমতের ভাষায়, “আমরা বিশ্বের অন্যদের মতো সুখী হতে চাই। একসময় স্বপ্ন দেখতাম—আমার ঘর হবে, চাকরি হবে। কিন্তু এখন আমার স্বপ্ন শুধু এমন একটি তাঁবু খুঁজে পাওয়া, যেখানে আমরা থাকতে পারব।”
বার্নার্ড কলেজের সমাজবিজ্ঞানী অধ্যাপক রান্ডা সেরহান মনে করেন, এই গণবিয়ে নতুন প্রজন্মের মধ্যে পরিবার ও ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতা বজায় রাখে। তার ভাষায়, “প্রতিটি নতুন বিয়ের সঙ্গে আসে নতুন জীবন—নতুন স্মৃতি, নতুন বংশধারা। অসম্ভব পরিস্থিতিতেও মানুষ টিকে থাকার পথ খুঁজে নেয়।”
গণবিয়ের এ দিনে বরেরা গাড়িবহর নিয়ে গাজার বিধ্বস্ত এলাকা প্রদক্ষিণ করেন। ফিলিস্তিনি পতাকা হাতে হিকমত ও ইমানসহ অন্যান্য যুগল শোভাযাত্রায় অংশ নেন। পরিবারগুলো বাদ্যের তালে নাচছিল—যদিও এমন উৎসব এখন গাজায় বিরল দৃশ্য। ভঙ্গুর যুদ্ধবিরতির মধ্যেও ঐতিহ্যটি আবার জেগে উঠছে, যদিও সেই আগের মতো জাঁকজমক নেই।
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক মানবিক সংস্থা ‘আল ফারেস আল শাহিম’ এই গণবিয়ের আয়োজন করে। তারা নবদম্পতিদের আর্থিক সহায়তার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় সামগ্রীও দিয়েছে।
ফিলিস্তিনিদের কাছে বিয়ে শুধু সামাজিক আনন্দের অনুষ্ঠান নয়; এটি অর্থনৈতিক ও পারিবারিক ভবিষ্যৎ গঠনের অন্যতম ভিত্তি। যুদ্ধ অনেক কিছুই ধ্বংস করেছে, কিন্তু এই গণবিয়ে প্রমাণ করেছে—আশা, ভালোবাসা ও জীবনের আকাঙ্ক্ষা ধ্বংসস্তূপের মাঝেও বেঁচে থাকে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি আগ্রাসনে গাজায় এখন পর্যন্ত ৭০ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত এবং ১ লাখ ৭০ হাজারের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতদের অধিকাংশই নারী ও শিশু। দুই বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা সংঘাতে গাজা কার্যত ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে।
তথ্যসূত্র: এপি, ডেইলি সাবাহ
মন্তব্য করুন

