

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


সরকারকে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি, অপরাধীদের গ্রেফতার ও বিচার করতে বিবৃতি দিয়েছে বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা “অধিকার”।
শনিবার (২০ ডিসেম্বর) মানবাধিকার সংস্থাটি এক বিবৃতিতে এসব কথা জানায়।
বিবৃতিতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি এবং বিচারহীনতার এক ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে। ওসমান হাদিকে গত ১২ ডিসেম্বর গুলি করে মারাত্মক ভাবে আহত করা হয় এবং এরপর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য পাঠানো হলে ১৮ ডিসেম্বর তিনি সেখানে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। ওসমান হাদি ছিলেন ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থানের একজন সংগঠক এবং পরবর্তী সময়ে গঠিত রাজনৈতিক-সাংস্কৃতি সংগঠন ইনকিলাব মঞ্চের আহবায়ক। তিনি বাংলাদেশে ভারতের আধিপত্যবাদের বিরোধিতা করতেন এবং আওয়ামীলীগের অপশাসনের বিরুদ্ধে উচ্চকন্ঠ ছিলেন। তিনি ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের ঢাকা-৮ এর প্রার্থীও ছিলেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ওসমান হাদির মৃত্যুর খবর আসার সঙ্গেসঙ্গেই কিছু ব্যক্তি-গোষ্ঠি ১৮ ডিসেম্বর রাতে ইংরেজী এবং বাংলা সংবাদ মাধ্যম 'ডেইলি স্টার', 'প্রথম আলো' সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট এবং ১৯ ডিসেম্বর উদিচিকে ভারতীয় আধিপত্যবাদের অংশ হিসেবে চিহ্নিত করে এদের কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করে এবং সম্পদ ধ্বংস করে। ১৮ ডিসেম্বর রাতে ডেইলীস্টার ভবনের ছাদে ৩০/৩৫ জন সাংবাদিক আটকা পরেন এবং তাঁদের সেখান থেকে ফায়ার সার্ভিস উদ্ধার করে। এদিন হামলাকারীদের হেনস্তার শিকার হয়েছেন সম্পাদক পরিষদের সভাপতি ও নিউএজ পত্রিকার সম্পাদক নূরুল কবীর।
অন্যদিকে ১৮ ডিসেম্বর রাতেই ময়মনসিংহের ভালুকায় ‘ধর্ম নিয়ে কটূক্তি' করার অভিযোগে পাইওনিয়ার নিট কম্পোজিট কারখানার গার্মেন্টস শ্রমিক হিন্দু ধর্মাবলম্বী দীপুচন্দ্র দাসকে (২৫) মারধর করে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করার পর মরদেহ আগুনে পুড়িয়ে দেয় 'তৌহিদী জনতা' নামের গোষ্ঠি। এছাড়া ১৯ ডিসেম্বর রাতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর এবং শেখ হাসিনার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহার মালিকানাধীন মাগুরা জেলার বাসভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়।
২০২৪ সালের গণঅভ্যুত্থানের পর ভারতে পলাতক শেখ হাসিনার সাড়ে ১৫ বছর শাসনামলে তিনটি জাতীয় নির্বাচন এবং সবকয়টি স্থানীয় সরকার নির্বাচন ছিল প্রহসনমূলক। হাসিনার আমলে জাতীয় নির্বাচনে ভারতের হস্তক্ষেপ ছিল লক্ষ্যনীয়। আসন্ন নির্বাচনের তফসিল ঘোষনার পরদিনই ওসমান হাদিকে গুলি করে অভিযুক্ত আওয়ামীলীগ এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মী ভারতে পালিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
অধিকারের বিবৃতিতে বলা হয়, ওসমান হাদির মৃত্যুর সংবাদের পর দেশে আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। হাদিকে গুলি করে হত্যা, পত্রিকা অফিসে হামলা, সাংবাদিক নূরুল কবিরের উপর হামলা, দীপুচন্দ্র দাসকে হত্যা, ছায়ানট- উদিচিতে হামলা, প্রসিকিউটরের বাসভবনে হামলার চরম নিন্দা জানাচ্ছে অধিকার৷
অধিকার মনে করে বহুল প্রতিক্ষিত নির্বাচনকে বানচাল করার জন্য কিছু গোষ্ঠি তৎপর রয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামীলীগের পক্ষ থেকে নির্বাচন সহিংস হবে তা আগেই হুমকী দেয়া হয়েছে। এই ধরনের ভয়াবহ সংঘাত ও নাশকতার আগে গোয়েন্দা নজরদারী এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সময়োচিত পদক্ষেপের অভাব নাগরিক নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।
অধিকার আরও জানায়, অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের দায়িত্ব দেশের জনগণের জানমাল রক্ষা করা এবং সুষ্ঠুভাবে আসন্ন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা। অধিকার মনে করে এই হত্যা, নাশকতা, হুমকী আসন্ন নির্বাচনকে বানচাল করারই প্রচেষ্টা।
অন্তর্বর্তিকালীন সরকারের প্রতি অধিকার এর নিম্নোক্ত সুপারিশসমূহ হল:
১। ওসমান হাদি হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত সবাইকে গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা ও ভারতে পালিয়ে যাওয়া ওসমান হাদীর অভিযুক্ত খুনীদের দেশে ফিরিয়ে দেবার জন্য সরকারকে ভারত সরকারের উপর প্রয়োজনে আন্তর্জাতিকভাবে চাপপ্রয়োগ করতে হবে।
২। দীপুচন্দ্র দাসকে হত্যাকান্ডের সাথে জড়িতদের গ্রেফতার করে বিচারের সম্মুখীন করা।
৩। সাংবাদিক, সংবাদ মাধ্যম, ভিন্নমতাবলম্বীসহ সব নাগরিকদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা।
৪। আসন্ন নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বতাকারী সমস্ত প্রার্থী এবং জুলাই আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত হুমকীর সম্মুখীন হওয়া সমস্ত নেতা কর্মীদের নিরাপত্তা দিতে হবে।
৫। গোয়েন্দা তৎপরতা বাড়াতে হবে যেন কোন অবাঞ্ছিত ঘটনা ঘটার আগেই তা প্রতিহত করা যায়।
৬। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে হবে। সন্ত্রাসের নামে যাতে কোন হত্যা নাশকতা না ঘটে সে বিষয়ে সরকারকে অত্যন্ত তৎপর হতে হবে।
মন্তব্য করুন
