

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে প্রচারণা শুরুর দিনেই ঢাবি ছাত্রী সংস্থার সভানেত্রী সাবিকুন্নাহার তামান্নার ছবি বিকৃত করার ঘটনা আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। ঐক্যবদ্ধ শিক্ষার্থী জোট থেকে সদস্য পদে প্রার্থিতা করায় তার ছবিতে ‘ডেভিল হর্ন’ এঁকে দিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।
ডাকসু নির্বাচনে সর্বোচ্চ ১০০৮৪ ভোট পেয়ে সদস্যদের মধ্যে জয় ছিনিয়ে এনেছেন তিনি। তার বিজয়ে ‘হিজাব হিজাব’ স্লোগান উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কক্ষে।
সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হওয়ার খবরে সাবিকুন্নাহার তামান্নাকে জড়িয়ে ধরেন সহযোদ্ধারা, প্রত্যেকেই নির্বাচিত হয়েছেন
তবে নির্বাচনী প্রচারণার শুরুর দিনই নয়, ধর্মীয় অনুশাসন কঠোরভাবে মেনে চলার কারণে ছোটবেলা থেকেই প্রতিবন্ধকতার পাহাড় ডিঙিয়ে আসতে হয়েছে তাকে।
কুমিল্লার মেয়ে সাবিকুন্নাহার তামান্না ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। পড়াশোনার পাশাপাশি সংসারও সামলাচ্ছেন তিনি, ১ বছর বয়সী এক সন্তানের জননী। এসএসসি ও এইচএসসি পরীক্ষায় অর্জন করেছিলেন জিপিএ-৫।
তিনি জানান জানিয়েছেন, বাবার চাকরি সূত্রে ২০১৫ সালে গাজীপুরে এসে একটি স্কুলে নবম শ্রেণিতে ভর্তি হন তামান্না। এ সময় ধর্মীয় অনুশাসনের কারণে নতুন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় তাকে। সে থেকে নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়েও নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এসেছেন তিনি।
সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, নবম শ্রেণিতে আমি নতুন স্কুলে ভর্তি হই। বোরকা পরেই যেতাম। প্রথম কয়েকদিন কিছু বলেনি। কিন্তু পরে একদিন হঠাৎ করেই স্যার বলছিলেন মুখ খোলার জন্য। বোরকা কেন পরে আসি, এ ধরনের প্রশ্ন করছিলেন। প্রথমে মুখ খুলতে চাইনি। তখন স্যার বললেন, হয় মুখ খুলবা, না হয় বের হয়ে যাবা। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে স্যার আর রোল কল করছে না, বা আর কোনো অপশন নাই দেখে ক্লাসরুম থেকে বের হয়ে গিয়েছিলাম। পরে বাসায় চলে যাই।
তামান্না বলেন, পরে ওই ঘটনার পর সমাধান হলে ফের নিকাব পরেই ক্লাসে যাওয়া শুরু করেন। এবং ওই স্কুল থেকেই এসএসসিতে অর্জন করেন জিপিএ-৫।
এসএসসির সাফল্যে আত্মবিশ্বাসী সাবিকুন্নাহার গাজীপুরে একটি বিশেষ বাহিনী পরিচালিত কলেজে ভর্তি হতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। কারণ পোশাকবিধির কারণে তা সম্ভব হয়নি। শুধু স্কুল-কলেজেই নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি ও পড়াশোনার সময়ও তাকে নানান কটূক্তি ও প্রতিবন্ধকতার মুখে পড়তে হয়েছে।
তবে শুধু স্কুল-কলেজ নয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সূচনা থেকেও নানা প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হয়ে আসছেন ডাকসুর নবনির্বাচিত এই সদস্য। কখনও ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখা, কখনও নানান বিষয়ে জেরা—এমন সব বাজে ঘটনায় ভরা তার অভিজ্ঞতার ঝুলি।
সাবিকুন্নাহার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে বলেন, যখন ভর্তি পরীক্ষা দিতে আসছি, তখন কান খুলে রাখতে হয়েছে। আর ক্লাসরুমেও আমাদের একজন শিক্ষক ছিলেন, উনি প্রায় সময়ই ক্লাসে দাঁড় করিয়ে রাখতেন, বা বলতেন যে আমাকে ক্লাসরুমের ওরা চিনে কিনা? আমি তো বিবাহিত, এটা নিয়েও স্যার অপমানই করতেন, এত অল্প বয়সে কেন বিয়ে করলাম। ‘আমরা মডার্ন না’, এরকম কথা বলতেন। পরীক্ষার হলেও একবার ঝামেলা করেছে, উনি এরকম বলছেন যে—মুখ ঢেকে রাখি এজন্য উনি সাইন করবেন না। বা আমার এডমিট কার্ডে যে ছবিটা আছে, এটা কিভাবে মুছে ফেলব, উনি তো এটা দেখছেন, এরকম বলছিলেন।
তবে কটূক্তি আর প্রতিবন্ধকতা ডিঙিয়ে আসার ‘চ্যালেঞ্জ’টিকে খুব কঠিনভাবে নিতে হয়নি সাবিকুন্নাহার তামান্নাকে। জামায়াতঘনিষ্ঠ পরিবারের কারণে ছোট থেকেই চ্যালেঞ্জ নিতে শিখেছেন বলে তিনি মনে করেন। ফলে সংসার সামলেও পড়াশোনা চালিয়ে নেওয়া আর ছাত্রী সংস্থার মূল নেতৃত্বে উঠে আসা থেকে ডাকসু পর্যন্ত জার্নিটা মোকাবিলা করেছেন বলেই মনে করেন তিনি। বলেন, আমরা ছোট থেকেই চ্যালেঞ্জের মধ্যেই ছিলাম, যেহেতু আমাদের পরিবার ছিল সাংগঠনিক এবং আমি ছোট থেকেই ছাত্রী সংস্থার সাথে জড়িত। ছোট থেকেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার মধ্য দিয়ে বড় হয়েছি। এ কারণে চ্যালেঞ্জ নেওয়ার বিষয়গুলো সহজ আমাদের কাছে। দ্বিতীয় বিষয় মনে হয়েছে যে আল্লাহর পক্ষ থেকে অনেক বেশি সাহায্য। আমার একটা ছোট বাচ্চাও আছে। পরীক্ষার আগে যখন অল্পও পড়তাম, দেখা যেত তাড়াতাড়ি সময়ে পড়াটা হয়ে যেত। আর পরিবারেরও সাপোর্ট আছে, সবাই অনেক সাপোর্টিভ।
সাবিকুন্নাহার তামান্না বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, ভোট পেয়েছি, অনেক শিক্ষার্থীর ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি। সামনে এক বছর ডাকসুর প্রতিনিধি হিসেবে থাকব। যে প্রত্যাশা দেখিয়েছিলাম, অনেকেই আমাকে বলেছে যে আপু আপনাকে ভোট দিলাম, আপনি বিজয়ী হয়ে আমাদের সমস্যাগুলোর সমাধান করবেন।
আমি অনেকের সমস্যার কথা শুনেছি, শিক্ষার্থীদের এই সমস্যাগুলো নিয়েই কাজ করব। আমি ইশতেহারে যে বিষয়গুলো দিয়েছি, এগুলো পালন করার চেষ্টা করব ইনশাআল্লাহ।
 সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
    
    সর্বশেষ খবর পেতে  Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
    
মন্তব্য করুন
 
 
                    