বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

আন্ডারওয়ার্ল্ড দ্বন্দ্বে শীর্ষ সন্ত্রাসী মামুন খুন, চুক্তি ২ লাখে

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম
হত্যায় অংশ নেওয়া দুই শুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।
expand
হত্যায় অংশ নেওয়া দুই শুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

রাজধানীর পুরান ঢাকায় শীর্ষ সন্ত্রাসী তারিক সাইফ মামুন (৫৫) হত্যায় অংশ নেওয়া দুই শুটারসহ মোট পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)।

গ্রেপ্তার দুই শুটার হলেন- ফারুক ওরফে কুত্তা ফারুক ও রবিন। বাকি তিনজন হলেন ইউসুফ, রুবেল ও শামীম।

ডিবি জানায়, আন্ডারওয়ার্ল্ডের আলোচিত জুটি ইমন-মামুনের দ্বন্দ্ব থেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সূত্রপাত। হত্যাকাণ্ডের মূল পরিকল্পনাকারী রনি। যিনি একসময় মুদি দোকানি ছিলেন এবং বর্তমানে কাফরুলের বাসিন্দা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী হিসেবে পরিচিত।

মামুনকে হত্যা করতে ইমনের হয়ে রনি নিজে দুই লাখ টাকা দেন এবং অস্ত্রও সরবরাহ করেন। মূল উদ্দেশ্য ছিল আন্ডারওয়ার্ল্ডে আধিপত্য বিস্তার। রনি এখনো পলাতক। তাঁকে খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

আজ বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, গ্রেপ্তার ফারুক ও রবিন পেশাদার শুটার।

তাদের কাছ থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি পিস্তল, নগদ টাকা এবং হত্যায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিবির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, গত ১০ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফটকের সামনে গুলি চালায় দুই অস্ত্রধারী। এতে গুরুতর আহত হন তারিক সাইফ মামুন। প্রথমে তাকে ন্যাশনাল মেডিকেলে নেওয়া হয়।

পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হলে চিকিৎসকেরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ঘটনার পরপরই ডিবি তদন্ত শুরু করে। আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ ও গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের শনাক্ত করে সিলেট, নরসিংদী ও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।

শফিকুল ইসলাম বলেন, গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টা ৫০ মিনিটের দিকে নরসিংদী সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকা থেকে ফারুক, রবিন, শামীম ও রুবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের তল্লাশি করে উদ্ধার করা হয় নগদ এক লাখ ৫৩ হাজার ৬৪০ টাকা, যা হত্যাকাণ্ডের পারিশ্রমিক হিসেবে মূল পরিকল্পনাকারী রনি দিয়েছিলেন।

ডিবি জানায়, ফারুক ও রবিন হত্যার পর রনির নির্দেশে ব্যবহৃত অস্ত্র ও গুলি রেন্ট-এ-কারচালক রুবেলের কাছে দেয়। পরে রুবেল অস্ত্রগুলো পেয়ে রনিকে জানানোর পর মোহাম্মদপুরের রায়েরবাজার এলাকায় ইউসুফ নামের এক দর্জির বাসায় নিয়ে লুকিয়ে রাখে। ইউসুফের ঘর তল্লাশি করে দুটি বিদেশি পিস্তল, ছয় রাউন্ড গুলি ও দুটি ম্যাগাজিন উদ্ধার করা হয়েছে।

ইউসুফ ও রুবেল স্বীকার করেছেন, রুবেল হত্যার দিন অস্ত্রভর্তি ব্যাগ ইউসুফের কাছে রেখে গিয়েছিলেন।

ডিবির তদন্তে উঠে এসেছে, মামুন হত্যার পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই চলছিল। শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের ঘনিষ্ঠ রনি ও তাঁর সহযোগী ফারুক একাধিকবার মামুনকে হত্যার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়। পরে ১০ নভেম্বর যেদিন মামুনের মামলার হাজিরার দিন ধার্য ছিল, সেদিনকেই বেছে নেন রনি। আগের দিন সন্ধ্যায় রনি তাঁর বাসায় রবিনকে ডেকে পরিকল্পনার চূড়ান্ত নির্দেশনা দেয়।

পরদিন সকালে রনি রবিনকে ফোনে আদালত এলাকায় যেতে বলে। সকাল ১০টার দিকে রবিন তাঁর বন্ধু শামীমের চালানো মোটরসাইকেলে করে সেখানে যায়। একইভাবে রনির নির্দেশে ফারুক, সুমন ও কামালও জজ কোর্ট এলাকায় অবস্থান নেন। প্রথমে সুমন ও ফারুককে গুলি চালানোর দায়িত্ব দেওয়া হলেও সুমনের সঙ্গে রনির বাগ্বিতণ্ডা হলে রনি তাঁর কাছ থেকে দুটি পিস্তল নিয়ে একটি ফারুক ও আরেকটি রবিনকে দেন।

ডিবি আরও জানায়, রনির নির্দেশে মামুনের চলাফেরার ওপর নজর রাখছিল কামাল। মামুন আদালতে পৌঁছালে কামাল সংকেত পাঠায়। সেই অনুযায়ী ফারুক ও রবিন তাঁর ওপর উপর্যুপরি গুলি চালান। গুলি শেষে তাঁরা দ্রুত এলাকা ত্যাগ করে বেড়িবাঁধ হয়ে রায়েরবাজারে যান। সেখানে তাঁরা রনির নির্দেশে অস্ত্রগুলো রুবেলের কাছে জমা রাখেন এবং পরে রনি তাঁদের পারিশ্রমিক হিসেবে দুই লাখ টাকা দেন।

রনির নির্দেশে হত্যাকারীরা ঢাকা ছেড়ে সিলেটের উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে পৌঁছে ভারতে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন তাঁরা। তবে সীমান্ত অতিক্রমে ব্যর্থ হয়ে সাতক্ষীরার পথে ঢাকায় ফেরার সময় গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে ধরা পড়েন।

ডিবি পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড আন্ডারওয়ার্ল্ডের পুরোনো দ্বন্দ্বেরই ধারাবাহিকতা। মামুন ও ইমন দুজনই শীর্ষ সন্ত্রাসী, যারা ঢাকার আন্ডারওয়ার্ল্ডের দখল নিয়ে লড়াই করছিল। আমরা মূল পরিকল্পনাকারী রনি ও তার সহযোগীদের ধরতে অভিযান অব্যাহত রেখেছি।’

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন