

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


দীর্ঘদিন ধরে দেশের শেয়ারবাজারে মন্দাভাব চললেও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ কিছুটা বাড়ছে।
তবে সামগ্রিকভাবে বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেলেও বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজার থেকে সরে যাওয়ার ধারায় রয়েছেন।
চলতি ডিসেম্বর মাসেও এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে, যা বাজারের জন্য উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাজার বিশ্লেষকদের মতে, রাজনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতির চাপ, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদহার এবং অর্থনীতির সার্বিক অনিশ্চয়তার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন অনেক বিনিয়োগকারী।
ফলে শেয়ারবাজারের পরিবর্তে সঞ্চয়পত্র কিংবা ব্যাংকের মেয়াদি আমানতের মতো তুলনামূলক নিরাপদ খাতে ঝুঁকছেন তারা।
সর্বশেষ বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনায় দেখা যায়, অব্যাহত দরপতনের ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবারও সূচকে বড় ধরনের পতন হয়েছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমে দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৮৯০ পয়েন্টে, যা আগের দিনের তুলনায় ৪২ পয়েন্ট কম। একই দিনে ডিএসই শরিয়াহ সূচক ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬ পয়েন্টে এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ পয়েন্ট হ্রাস পেয়ে ১ হাজার ৮৭৭ পয়েন্টে নেমে আসে।
সূচকের পাশাপাশি লেনদেনের পরিমাণেও নেতিবাচক প্রবণতা দেখা গেছে।
ডিএসইতে এদিন মোট লেনদেন হয়েছে ৪১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা, যেখানে আগের কার্যদিবসে লেনদেন ছিল ৪৫৭ কোটি ৪৯ লাখ টাকা।
অর্থাৎ এক দিনের ব্যবধানে লেনদেন কমেছে ৪৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা।
অন্যদিকে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জেও (সিএসই) একই চিত্র পরিলক্ষিত হয়েছে। সেখানে সার্বিক সূচক সিএএসপিআই ৭৬ পয়েন্ট কমেছে।
এদিন সিএসইতে লেনদেন হয়েছে মাত্র ৫ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবসের ১২ কোটি ৪০ লাখ টাকার তুলনায় অনেক কম।
বিশ্লেষকদের মতে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ভালো-মন্দ নির্বিশেষে অধিকাংশ তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারদর কমেছে।
ফলে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীরা যেসব কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছিলেন, সেগুলোর বড় অংশ বিক্রি করে বাজার ছাড়ছেন।
এ বিষয়ে ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, বিদেশি বিনিয়োগকারীরা এখনো বাজারের সংস্কার ও নীতিগত উদ্যোগের দিকে নজর রাখছেন।
বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না থাকায় তারা সতর্ক অবস্থানেই রয়েছেন।
সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্য অনুযায়ী, চলতি ডিসেম্বরের প্রথম ১১ কার্যদিবসে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে খোলা বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব কমেছে ১৪টি।
একই সময়ে দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়ায় মোট বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৭৫২টি।
সিডিবিএলের সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমানে বিদেশি ও প্রবাসী বিনিয়োগকারীদের নামে মোট বিও হিসাব রয়েছে ৪৩ হাজার ৫৪৫টি, যা মাসের শুরুতে ছিল ৪৩ হাজার ৫৫৯টি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাজার ছাড়ার প্রবণতা শুরু হয়। সে সময় বিদেশি ও প্রবাসীদের নামে বিও হিসাব ছিল ৫৫ হাজার ৫১২টি।
অর্থাৎ ওই সময়ের পর থেকে এখন পর্যন্ত এ সংখ্যা কমেছে প্রায় ১১ হাজার ৯৬৭টি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের এ ধারাবাহিক সরে যাওয়ার প্রবণতা দেশের শেয়ারবাজারে আস্থার ঘাটতিরই প্রতিফলন।
অন্যদিকে চলতি মাসে মোট বিনিয়োগকারীর বিও হিসাব বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৬ লাখ ৩৮ হাজার ৭২১টিতে, যা মাসের শুরুতে ছিল ১৬ লাখ ৩৬ হাজার ৯৬৯টি। সে হিসাবে ডিসেম্বর মাসে প্রতিদিন গড়ে ১৫৯টি করে নতুন বিও হিসাব যুক্ত হয়েছে।
দেশীয় বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ তুলনামূলকভাবে বাড়লেও দীর্ঘমেয়াদি চিত্র আশাব্যঞ্জক নয়।
২০২৪ সালের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শেয়ারবাজারে মোট বিও হিসাব কমেছে ১ লাখ ৩৪ হাজার ৮৩০টি। বছরের শুরুতে এই সংখ্যা ছিল ১৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫৫১টি।
এদিকে চলতি মাসে নারী ও পুরুষ-উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যাই বেড়েছে। পুরুষ বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বেড়েছে ১ হাজার ৪৪৯টি এবং নারী বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব বৃদ্ধি পেয়েছে ২৭৯টি।
পাশাপাশি কোম্পানি পর্যায়ের বিও হিসাব ২৪টি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ হাজার ৭৭২টিতে।
উল্লেখ্য, শেয়ারবাজারে বিনিয়োগের জন্য বিনিয়োগকারীদের ব্রোকারেজ হাউস বা মার্চেন্ট ব্যাংকের মাধ্যমে যে হিসাব খুলতে হয়, সেটিই বিও হিসাব নামে পরিচিত।
এই হিসাবের মাধ্যমেই শেয়ার কেনাবেচা সম্পন্ন হয়। বিও হিসাব ছাড়া শেয়ারবাজারে লেনদেন সম্ভব নয়। এসব হিসাবের তথ্য সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব পালন করে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল)।
মন্তব্য করুন

