শনিবার
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শনিবার
২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

ধানের জমিতে বেগুনের বিপ্লব, এক গাছে বারোমাস ফলন

নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১:০১ এএম
বেগুন ক্ষেত
expand
বেগুন ক্ষেত

নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলায় কৃষির চিত্রে ঘটেছে এক অভূতপূর্ব পরিবর্তন। একসময় ধানচাষের ওপর নির্ভরশীল এ অঞ্চলের কৃষকরা এখন ধান ছেড়ে বেগুন চাষে ঝুঁকছেন – এবং ফল পাচ্ছেন চোখ ধাঁধানো! ধানের তুলনায় ১৫ থেকে ২০ গুণ বেশি লাভ এনে দিচ্ছে এই সবজি। উঁচু জমিতে আধুনিক 'মালচিং পদ্ধতি' প্রয়োগ করে একই গাছে বারোমাসি ফলন নিশ্চিত করায় কৃষকদের জীবনযাত্রায় এসেছে আমূল পরিবর্তন। এ চাষ না শুধু স্থানীয় অর্থনীতিকে শক্তিশালী করছে, বরং দেশের সবজি উৎপাদনে নতুন মাত্রা যোগ করছে।

মালচিং পদ্ধতির জাদু; কম খরচে অধিক ফলন—মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে মাটির আর্দ্রতা সংরক্ষণ, আগাছা নিয়ন্ত্রণ এবং পোকামাকড়ের আক্রমণ কমানো সম্ভব হয়েছে। ফলে গাছের জীবনকাল বেড়ে যায় এবং একই গাছ থেকে সারা বছর ফলন পাওয়া যায়। বাংলাদেশে বেগুন চাষের এই আধুনিক কৌশল কৃষকদের খরচ কমিয়ে লাভ বাড়িয়ে দিচ্ছে দ্বিগুণেরও বেশি। গবেষণায় দেখা গেছে, মালচিংয়ে পানি সাশ্রয় হয় ৩০-৫০ শতাংশ এবং ফলন বাড়ে ২০-৩০ শতাংশ।

একসময় সুবর্ণচরের অনেক কৃষক জীবিকার সন্ধানে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শ্রম বিক্রি করতে যেতেন। আজ তারা নিজেদের জমিতে বেগুন চাষ করে স্বাবলম্বী। বেকার যুবকরা এ চাষে যুক্ত হয়ে নতুন জীবন শুরু করেছেন। উল্টো, আশপাশের জেলা থেকে শ্রমিকরা এখানে কাজ করতে আসছেন৷ চরজব্বার ইউনিয়নের কৃষক রহুল আমিন বলেন, “আগে শ্রম বিক্রি করতে অন্য জায়গায় যেতাম। এখন বেগুন চাষে ভালো আয় হচ্ছে। বেকারত্ব ঘুচেছে।”

আরেক সফল চাষি জাফর উল্যাহ জানান, মাত্র ৮০ শতক জমিতে ৩ লাখ টাকা খরচ করে ইতোমধ্যে সাড়ে সাত লাখ টাকার বেগুন বিক্রি করেছেন। বাকি ফসল থেকে আরও ৭-৮ লাখ টাকা আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। “ধান চাষে এত লাভ কখনো সম্ভব ছিল না,”৷

সুবর্ণচর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশীদ জানান, সরকারি অর্থায়নে কৃষকদের বীজ, সার, নগদ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। পোকামাকড় প্রতিরোধে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) প্রয়োগ করে নিরাপদ চাষ নিশ্চিত করা হচ্ছে।

উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন কৃষকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দিচ্ছেন। তবে আগাম চাষে পোকামাকড়ের আক্রমণ একটি চ্যালেঞ্জ। কৃষি বিভাগের সক্রিয় তত্ত্বাবধানে এটি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হচ্ছে।

চলতি মৌসুমে উপজেলায় ২২০ হেক্টর জমিতে শীতকালীন বেগুন চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও ন্যায্য বাজারমূল্য পেলে এ চাষ আরও বিস্তৃত হবে। বাংলাদেশে বেগুন উৎপাদনের পরিসংখ্যানেও এ অঞ্চলের অবদান উল্লেখযোগ্য হয়ে উঠছে।

কৃষক ও কৃষি বিভাগের প্রত্যাশা –সুবর্ণচর শিগগিরই দেশের বেগুন উৎপাদনের একটি মডেল অঞ্চলে পরিণত হবে। এই সবুজ বিপ্লব না শুধু কৃষকদের ভাগ্য বদলাচ্ছে, বরং গোটা অঞ্চলের অর্থনৈতিক মানচিত্রে নতুন আলো জ্বালাচ্ছে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X