

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


হতদরিদ্র পরিবারে থেকেও কীভাবে সংগ্রাম করে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে হয়, তার জীবন্ত উদাহরণ কুড়িগ্রামের মীম।
একদিকে বিয়ের চাপ, অপরদিকে অর্থকষ্ট। পকেটে টাকা না থাকায় রোজা রেখে দিন পার করতে হয়েছে তাকে। এমন প্রতিকূলতার মধ্যেও স্বপ্নপূরণের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে এই অদম্য মেধাবী শিক্ষার্থী। বর্তমানে সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
দিনমজুর বাবার পক্ষে পড়াশোনার খরচ চালানো কষ্টকর হয়ে পড়ায় প্রতিবেশীদের চাপে মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বাবা মতিয়ার রহমান। কিন্তু মীমের ইচ্ছে ছিল পড়াশোনা চালিয়ে গিয়ে বিসিএস দিয়ে প্রশাসনিক ক্যাডারে যোগ দেওয়া।
মামার সহায়তায় কান্নাকাটি করে নিজের বিয়ে ঠেকিয়ে দেয় সে। আর সেই মেয়েই এবার এইচএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়ে চমকে দিয়েছে সবাইকে।
তবে তার শিক্ষার পথ এখনো মসৃণ নয়। বাবার সামান্য দিনমজুরির টাকায় চলে সংসার।
৮ শতক বাড়িভিটা ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই। দুই বোন ও এক ভাইসহ পাঁচ সদস্যের সংসারে খাবার জোগাড় করাই কঠিন, সেখানে মেয়েকে পড়ানো আরও কঠিন। তবুও মীমের অদম্য ইচ্ছাশক্তিই তাকে আলো দেখাচ্ছে।
কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী উপজেলার সদর ইউনিয়নের বাগভান্ডার সোনাতলি গ্রামের দিনমজুর মতিয়ার রহমানের মেয়ে মীম। পরিবারের কেউ এসএসসি পাস না করলেও মীম এসএসসি ও এইচএসসি উভয় পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে সবাইকে বিস্মিত করেছে।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া তার জন্য ছিল প্রায় অসম্ভব। তবুও মেয়ের ইচ্ছের কারণে এনজিও থেকে ৩০ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে তাকে রংপুরে ভর্তি পরীক্ষার কোচিংয়ে পাঠানো হয়।
সেখান থেকেই শুরু হয় নতুন সংগ্রাম। রংপুরে মেস ভাড়া, যাতায়াত ও খাবারের টাকার যোগান দিতে গিয়ে প্রায়ই অনাহারে থাকতে হয়েছে তাকে।
মীমের মা আয়েশা খাতুন বলেন, “মেয়েটা অনেক কষ্ট করেছে। জুতা না থাকায় ক্লাসে ঢুকতে দেয়নি শিক্ষকরা।
ঋণ করে জুতা কিনে দিয়েছি। অনেক সময় যাতায়াতের টাকা দিতে পারিনি—সে তিন কিলোমিটার হেঁটে স্কুলে গেছে। ভালোমন্দ কিছু খাওয়াতে পারিনি, তারপরও মেয়েটি ভাল ফলাফল করেছে। এমন মেয়ে পাওয়া ভাগ্যের বিষয়।”
বাবা মতিয়ার রহমান বলেন, “মেয়ে জিপিএ-৫ পাওয়ায় আমি অনেক খুশি। রক্ত বিক্রি করে হলেও মেয়েকে পড়াবো। সে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে বিসিএস দিতে চায়, আমিও সেই স্বপ্ন দেখি।”
মাছুমা আক্তার মীম জানায়, “টেস্ট পরীক্ষা দেওয়ার পর আমার বিয়ে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল।
তখন আমি অনেক কেঁদেছিলাম। মামা বাবাকে বুঝিয়ে বিয়ে বন্ধ করে দেয়। এখন পরিবার আমার পাশে আছে, কিন্তু অর্থকষ্টে পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়া কঠিন। রংপুরে থাকার সময় খাবারের টাকা না থাকায় রোজা রাখতে হয়েছে। এখনো জানি না, কত দূর যেতে পারব।”
মীমের শিক্ষক ভূরুঙ্গামারী মহিলা কলেজের কৃষি শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সফিয়ার রহমান বলেন, “মীম খুব মেধাবী ও পরিশ্রমী ছাত্রী। তার পরিবার দরিদ্র। সরকারি বা বেসরকারি সহায়তা পেলে মেয়েটি নির্বিঘ্নে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারবে।”
মন্তব্য করুন