

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


ময়মনসিংহ ও নেত্রকোণার সরকারি খাদ্য গুদামগুলোতে চলছে প্রকাশ্য বদলি বাণিজ্য। মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই একের পর এক কর্মকর্তাকে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে প্রত্যাহার করিয়ে নেওয়া হচ্ছে।
এরপর মোটা অঙ্কের ঘুষের বিনিময়ে পছন্দের গুদামে নতুন কর্মকর্তাদের পদায়ন করা হচ্ছে। এতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে দেখা দিয়েছে গুরুতর প্রশ্ন।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি অন্তত ছয়টি খাদ্য গুদামে এ ধরনের অনিয়ম ঘটেছে। অভিযোগ উঠেছে—ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে গঠিত একটি প্রভাবশালী সিন্ডিকেটই এই বদলি বাণিজ্যের মূল নিয়ন্ত্রক। পুরো প্রক্রিয়ায় মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করছেন খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল।
খাদ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, আঞ্চলিক অফিস থেকেই কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে আবেদন লিখিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কেউ অস্বীকৃতি জানালে প্রশাসনিক জটিলতায় ফেলার হুমকি দেওয়া হয়।
তাদের দাবি, এসব বদলি ও পদায়নের ক্ষেত্রে ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষের লেনদেন হচ্ছে।
এক কর্মকর্তা বলেন, একসঙ্গে এতজন কর্মকর্তাকে পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে প্রত্যাহার করা এবং পরে ঘুষের বিনিময়ে নতুনদের বসানো—এর আগে কখনও এমনটা দেখা যায়নি।
নিয়মবহির্ভূত পদায়নের পর বাতিল নেত্রকোনার কেন্দুয়া সদর খাদ্য গুদামে সম্প্রতি বিধিবহির্ভূতভাবে এক উপ-পরিদর্শককে পরিদর্শকের দায়িত্বে পদায়ন করা হয়।
নিয়ম অনুযায়ী সেখানে পরিদর্শক পদমর্যাদার কর্মকর্তা থাকার কথা। অভিযোগ ওঠার পর উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বাধ্য হয়ে সেই পদায়ন বাতিল করে।
এছাড়া নেত্রকোনা সদর, ঠাকুরাকোনা, ময়মনসিংহের গৌরীপুর, তারাকান্দা, ধলা ও শ্যামগঞ্জ গুদামে দুই বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই কর্মকর্তাদের বদলি করা হয়েছে। অনেক ক্ষেত্রেই একই কর্মকর্তাকে অল্প সময়ের ব্যবধানে দুইবার পর্যন্ত বদলি করা হয়েছে।
তারাকান্দা খাদ্য গুদামের কর্মকর্তা মো. আলাল হোসেনকে ১৯ আগস্ট মেয়াদ পূর্ণের দুই মাস আগেই বদলি করে প্রথমে ফুলবাড়িয়া, পরে গৌরীপুরে পাঠানো হয়—সব মিলিয়ে মাত্র ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই দফা বদলি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আলাল হোসেন প্রতিবেদককে বলেন, আপনি একসময় আমার অফিসে আসেন, একটু বসে কথা বলব।
তবে ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই দফা বদলির বিষয়ে তিনি কিছু বলেননি। একইভাবে ২২ অক্টোবর বদলি করা হয় নেত্রকোনা সদর গুদামের কর্মকর্তাকেও।
মিচুয়াল ট্রান্সফার অজুহাতে নিয়ম ভাঙা নেত্রকোনার ঠাকুরাকোণা এলএসডিতে দায়িত্বে থাকা শামিম আহম্মেদ পারিবারিক সমস্যা দেখিয়ে মিচুয়াল ট্রান্সফারের মাধ্যমে সেখানে আব্দুল ওয়াহাবকে বসিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল।তবে নিয়মানুযায়ী মিচুয়াল ট্রান্সফারের কোনো সুযোগ নেই।
এ বিষয়ে শামিম আহম্মেদ বলেন, আমার পারিবারিক সমস্যার কারণে দীর্ঘদিন ট্রান্সফারের চেষ্টা করছিলাম। নিয়মানুযায়ী ট্রান্সফার হয়েছি। কোনো মিচুয়াল ট্রান্সফার করিনি।এরপর প্রতিবেদকের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা এইগুলো নিয়ে খোঁচাখুঁচি করছেন কেন?
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তাদের তদন্তের দাবি
মাঠপর্যায়ের কর্মকর্তারা বলছেন, ঘুষ ছাড়া এখন কোনো পদায়নের সুযোগ নেই। এতে দক্ষ ও সৎ কর্মকর্তারা বঞ্চিত হচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, খাদ্য গুদামগুলোর প্রশাসনিক নিয়োগে স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনতে দ্রুত তদন্ত হওয়া জরুরি।
খাদ্য অধিদপ্তরের এক পরিদর্শক জানান, এসব অনিয়ম প্রশাসনের জ্ঞাতসারেই ঘটছে, কিন্তু কেউ প্রকাশ্যে কথা বলতে চাইছেন না।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে খাদ্য পরিদর্শক মো. মাজহারুল ইসলাম কামাল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, যাদের বদলির অর্ডার হয়েছে, তারা কি কেউ আপনাকে সাক্ষাৎকার দিয়েছে? আমাদের বিপক্ষে কিছু গ্রুপ আছে, তারা এসব মিথ্যা ছড়াচ্ছে। আমরা একটি জেক লাগিয়ে দেখছি কারা এসব বলছে। শিগগিরই বের হয়ে যাবে। আমাদের আরসি ফুড স্যার খুব ভালো মানুষ, কেউ তাঁর দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, আরসি ফুড স্যার অনেক সময় ফোন ধরেন না, তদবিরও থাকে।
ময়মনসিংহ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক আশরাফুল আলমকে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
খাদ্য পরিদর্শক মাজহারুল ইসলাম কামাল নিশ্চিত করেছেন যে, প্রতিবেদক ফোন দিচ্ছেন কিন্তু আরসি ফুড স্যার ফোন ধরছেন না।
খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীরের অফিসিয়াল নাম্বারে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে খাদ্য সচিব মাসুদুল হাসান বলেন, একসাথে এতজনের পারিবারিক সমস্যা রহস্যজনক। বদলি বাণিজ্যের বিষয়ে তদন্ত করে প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে
মন্তব্য করুন