শুক্রবার
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
শুক্রবার
১৪ নভেম্বর ২০২৫, ৩০ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

জনস্বাস্থ্য সুরক্ষায় আর্থিক চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ, আন্তর্জাতিক সহায়তার আহ্বান

এনপিবিনিউজ ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:২৭ পিএম
কপ৩০-এর হেলথ ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলন
expand
কপ৩০-এর হেলথ ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলন

জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বাংলাদেশ বড় আর্থিক চ্যালেঞ্জে রয়েছে। দেশের স্বাস্থ্য খাতে যে অভিযোজন সহায়তা দরকার সে তুলনায় আন্তর্জাতিক সগায়তা পাওয়া যাচ্ছে না—ফলে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠছে। ব্রাজিলের বেলেমে কপ৩০-এর হেলথ ডে উপলক্ষে আয়োজিত এক সম্মেলনে এসব কথা বলেছেন পরিবেশ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলের সদস্য মো. জিয়াউল হক।

“অভিযোজন অর্থায়নের কেন্দ্রে স্বাস্থ্যের অবস্থান” শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনটি যৌথভাবে আয়োজন করে রিজিওন৪, গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্স ও কার্বন কপি। এসময় সংকট কাটাতে জিয়াউল হক বাংলাদেশের জন্য প্রতিশ্রুত জলবায়ু অর্থায়ন নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানান।

তিনি বলেন, “আমাদের হেলথ ন্যাশনাল অ্যাডাপটেশন প্ল্যান বাস্তব সমস্যা শনাক্ত করা, সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং সীমিত সম্পদ আরও কার্যকরভাবে ব্যবহারের জন্য প্রণয়ন করা হয়েছিল। “কিন্তু বাস্তবতা হলো—স্বাস্থ্যখাতে অভিযোজন অর্থায়ন প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। আমাদের চাহিদা এবং প্রাপ্ত অর্থের মধ্যে ব্যবধান বিশাল।”

জিয়াউল হক বলেন, ২০১৩ সাল থেকে জলবায়ু সম্মেলনে জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি আলোচ্যসূচিতে থাকলেও অগ্রগতি “হতাশাজনকভাবে ধীর গতিসম্পন্ন”। বহুপাক্ষিক অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর উচিত সংকটের পরিধির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ, বাস্তবসম্মত ও সমন্বিত প্রস্তাব সামনে আনা।”

সংবাদ সম্মেলনে বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন দ্রুত মানবস্বাস্থ্যের অন্যতম বড় হুমকি হিসেবে আবির্ভূত হচ্ছে, আর বিদ্যমান স্বাস্থ্যব্যবস্থা ক্রমাগত চাপের মুখে ও অপ্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে।

ল্যানসেট কাউন্টডাউনের নির্বাহী পরিচালক ড. মারিনা রোমানেল্লো বলেন,“প্রতি বছর তীব্র গরমে বিশ্বব্যাপী পাঁচ লাখের বেশি মানুষের মৃত্যু হয় এবং দাবানল থেকে সৃষ্ট ধোঁয়ার কারণে এক লাখ ৫০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়। বিশ্বের স্বাস্থ্যব্যবস্থা ইতিমধ্যে চাপের মধ্যে এবং অর্থ সংকটে রয়েছে—এবং বেশিরভাগ দেশই সামনে কী আসছে তার জন্য প্রস্তুত নয়।”

তিনি জানান, মাত্র ৪৪ শতাংশ দেশ তাদের স্বাস্থ্য অভিযোজনের আর্থিক চাহিদা নিরূপণ করতে পেরেছে, ফলে বহু বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে চিলি, নাইজেরিয়া, ভারত ও কপ৩০ এর প্রতিনিধিরা বলেন, স্বাস্থ্য খাতের অর্থায়ন সংকট আসলে সামগ্রিকভাবে অভিযোজন অর্থায়নের বিশাল বৈশ্বিক ঘাটতির প্রতিচ্ছবি।

২০২৫ সালের অ্যাডাপটেশন গ্যাপ রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০৩৫ সালের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জলবায়ু অভিযোজনের জন্য বছরে ৩১০–৩৬৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে। কিন্তু বৈশ্বিক সম্প্রদায় এখনও গ্লাসগো চুক্তিতে প্রতিশ্রুত ৪০ বিলিয়ন ডলার জোগাড় করতেই হিমশিম খাচ্ছে।

কপ৩০ এ আফ্রিকার বিশেষ দূত কার্লোস লোপেস বলেন, “স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়ন ঘাটতি বিশাল। বেশিরভাগ উদ্যোগই দেশগুলো নিজেদের অর্থায়নে চালাচ্ছে। আন্তর্জাতিক সহায়তা অবশ্যই পরিপূরক হওয়া উচিত এবং তা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়াতে হবে।”

জাতিসংঘ পরিবেশ কর্মসূচির (ইউএনইপি) তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে বহুপাক্ষিক অভিযোজন অর্থায়নের মাত্র ৪ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে গেছে। আর আলাদা এক গবেষণায় অ্যাডেলফি দেখিয়েছে, মোট বহুপাক্ষিক জলবায়ু অর্থায়নের মাত্র ০.৫ শতাংশ স্বাস্থ্য-সম্পর্কিত উদ্যোগে ব্যয় হয়।

গত মাসে প্রকাশিত ল্যানসেট কাউন্টডাউন রিপোর্টে দেখা যায়, জলবায়ু-সম্পর্কিত মৃত্যু দ্রুত বাড়ছে। তীব্র গরম, বন্যা, অনিয়মিত বৃষ্টি, ঘূর্ণিঝড় ও মরুকরণ বিশ্বজুড়ে সম্প্রদায় ও স্বাস্থ্যসেবায় নজিরবিহীন চাপ সৃষ্টি করছে। এই প্রেক্ষাপটে, বেলেমে বিশ্ব নেতারা একত্রিত হয়েছেন—যা অনেকে “অভিযোজন কপ” ও “বাস্তবায়ন কপ” বলে উল্লেখ করছেন—এবং আশা করা হচ্ছে, বিশেষ করে স্বাস্থ্যখাতে দৃশ্যমান অগ্রগতি নিশ্চিত করা হবে।

সংবাদ সম্মেলনে ভারত ও নাইজেরিয়ার প্রতিনিধিরা জানান, দ্রুত বিনিয়োগ বাড়ানো জরুরি। ভারতের কাউন্সিল ফর এনার্জি, এনভায়রনমেন্ট অ্যান্ড ওয়াটারের ফেলো ও জাতিসংঘের গবেষণা ফেলো ড. বিশ্বাস চিতালে জানান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় ২০৩০ সালের মধ্যে দেশটির ৬৪৩ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন হবে।

নাইজেরিয়ার প্রতিনিধি ওডেন ইওয়া জানান, ২০২১–২২ সালে তাদের স্বাস্থ্য খাতের অভিযোজন চাহিদার মাত্র ৬ শতাংশ অর্থায়ন করা সম্ভব হয়েছে, যদিও তাপদাহ ও ভারী বর্ষণের কারণে রোগের বোঝা বাড়ছে।

আয়োজকরা নতুন গঠিত ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ ফান্ডার্স কোয়ালিশনকে স্বাগত জানান, যারা ৩০০ মিলিয়ন ডলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রয়োজন মেটাতে আরও অনেক বড় বিনিয়োগ দরকার।

গ্লোবাল ক্লাইমেট অ্যান্ড হেলথ অ্যালায়েন্সের নির্বাহী পরিচালক জেনি মিলার বলেন “জলবায়ু অভিযোজনে স্বাস্থ্যকে কেন্দ্রীয় অগ্রাধিকার দিতে হবে, বিশ্ব এখনো এর গুরুত্ব পুরোপুরি বুঝতে শুরু করেছে মাত্র।”

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন