মঙ্গলবার
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
মঙ্গলবার
৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৫ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

মৃত্যুতেও থামেনি মানুষের ভালোবাসা: স্মরণকালের স্মরণীয় জানাজা

এনপিবি ডেস্ক
প্রকাশ : ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৭:৩০ পিএম
স্মরণকালের স্মরণীয় কিছু জানাজা/ ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস, ফাইল ছবি
expand
স্মরণকালের স্মরণীয় কিছু জানাজা/ ছবি: উইকিমিডিয়া কমনস, ফাইল ছবি

বিশ্ব ইতিহাসে কিছু জানাজা শুধু ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতা নয়, বরং তা রূপ নিয়েছিল বিরল জনসমুদ্রে। বিশেষ করে মুসলিম বিশ্বের কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনৈতিক ও ধর্মীয় ব্যক্তিত্বের শেষ বিদায়ে মানুষের উপস্থিতি বিশ্ববাসীকে আজও অবাক করে।

বিভিন্ন ঐতিহাসিক দলিল ও গণমাধ্যমের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, এসব জানাজায় অংশ নিয়েছিল কয়েক লাখ থেকে কোটি মানুষ।

১. আয়াতুল্লাহ রুহুল্লাহ খোমেনি (ইরান, ১৯৮৯) ইতিহাসের অন্যতম বৃহত্তম জনসমাগম হিসেবে পরিচিত আয়াতুল্লাহ খোমেনির জানাজা। ১৯৮৯ সালে ইরানের তেহরানে এই শোকসভায় প্রায় ১ কোটি ২ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল। বিপুল ভিড়ের কারণে দাফন প্রক্রিয়া কয়েকবার স্থগিত করতে হয়েছিল।

২. গামাল আবদেল নাসের (মিশর, ১৯৭০) মিশরের সাবেক জনপ্রিয় প্রেসিডেন্ট গামাল আবদেল নাসেরের জানাজায় কায়রোতে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ মানুষ সমবেত হয়েছিলেন বলে দাবি করা হয়। আরব্য জাতীয়তাবাদী এই নেতার মৃত্যুতে পুরো আরব বিশ্বে শোকের ছায়া নেমে এসেছিল, যা আধুনিক ইতিহাসের অন্যতম বৃহৎ শোকযাত্রা।

৩. উম্মে কুলসুম (মিশর, ১৯৭৫) মিশরের কিংবদন্তি গায়িকা উম্মে কুলসুমের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল কায়রোতে। এতে প্রায় ৪০ লাখ মানুষ অংশ নেয়, যা ইতিহাসে অন্যতম বৃহত্তম জনসমাগম হিসেবে পরিচিত।

৪. আয়াতুল্লাহ হাশেমি রাফসাঞ্জানি (ইরান, ২০১৭) ইরানের সাবেক প্রেসিডেন্ট আয়াতুল্লাহ আলী আকবর হাশেমি রাফসাঞ্জানির জানাজা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। তেহরানে আয়োজিত এই জানাজায় দেশটির রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যমের হিসাবে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল।

৫. মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ (পাকিস্তান, ১৯৪৮) পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা মুহাম্মদ আলী জিন্নাহ ১৯৪৮ সালে মারা যান। করাচিতে অনুষ্ঠিত তার জানাজায় প্রায় ১০ লাখ মানুষ অংশ নিয়েছিল বলে জানায় স্থানীয় সংবাদমাধ্যমগুলো।

৬. শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে এক ব্যর্থ সামরিক অভ্যুত্থানে নিহত হন বাংলাদেশের তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। তাকে ঢাকার শেরে বাংলা নগরে দাফন করা হয়। প্রেসিডেন্ট জিয়ার জানাজায় প্রায় ২০ লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হয়েছিল। এটি বাংলাদেশের ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম হিসেবে পরিচিত।

৭. শহীদ শরিফ ওসমান হাদি বাংলাদেশের তরুণ রাজনীতিবিদ ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গত ১২ ডিসেম্বর ঢাকার বিজয়নগর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন। ছয়দিন পর গত ১৮ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন তিনি। ২০ ডিসেম্বর মানিক মিয়া এভিনিউতে জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। ধারণা করা হয়, হাদির জানাজায় ১০ লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছিল।

৮. মুফতি আক্তার রাজা খান (ভারত, ২০১৮) ভারতের বিখ্যাত ইসলামী স্কলার তাজুশ শরিয়া মুফতি আক্তার রাজা খানের জানাজা হয়েছিল ২০১৮ সালে বরেলিতে। সেখানে প্রায় ১০ লাখ মানুষের সমাগম হয়েছিল বলে বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে দাবি করা হয়।

৯. এ পি জে আব্দুল কালাম (ভারত, ২০১৫) ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এ পি জে আব্দুল কালামের জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল নিজ শহর রামেশ্বরমের পেই কারুম্বু ময়দানে। সেখানে সাড়ে তিন লাখের বেশি মানুষ অংশ নিয়েছিল বলে জানা যায়।

১০. শেখ আহমদ ইয়াসিন (ফিলিস্তিন, ২০০৪) ২০০৪ সালে গাজায় হামাস প্রতিষ্ঠাতা শেখ আহমদ ইয়াসিনের জানাজায় অন্তত দুই লাখ মানুষ অংশ নেয়। এটি আধুনিক ফিলিস্তিনি ইতিহাসে অন্যতম বৃহৎ জনসমাগম।

অংশগ্রহণকারীর সংখ্যার বিচারে আয়াতুল্লাহ খোমেনি এবং গামাল আবদেল নাসেরের জানাজা মুসলিম বিশ্বের ইতিহাসে অতুলনীয় উদাহরণ হয়ে আছে। এই বিশাল জমায়েতগুলো সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের প্রতি জনমানুষের অগাধ ভালোবাসা ও প্রভাবেরই প্রতিফলন।

সূত্র: উইকিপিডিয়া, সিয়াসাত ডেইলি, আইআরএনএ

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X