

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের বিতর্কিত কয়েকজন কর্মকর্তার ষড়যন্ত্রের কারণে অধিকাংশ তাঁত শিল্প বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া দেশের ৩০ লাখ তাঁতি ও ৬০ লাখ তাঁত শ্রমিক দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন।
ইতোপূর্বে তাঁতিরা তাঁত বোর্ডের সহায়তায় সুতা, রং, রাসায়নিক আমদানি করে স্বস্তির সঙ্গে ব্যাবসা করে আসছিলেন। কিন্তু তাঁত বোর্ড গত দেড় বছরে তাঁদেরকে সুতা, রং, রাসায়নিক আমদানি সুপারিশ দেয়নি।
ফলে খোলা বাজারে এসবের মূল্য দ্বিগুন বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণেই আগে যে কাপড়টি তৈরি করতে খরচ হতো ৫০০ টাকা সেটি এখন তৈরি করতে খরচ হচ্ছে ১০০০ টাকা। এ কারণে দেশের অধিকাংশ তাঁত বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। একই সঙ্গে হাজার হাজার তাঁত শ্রমিক বেকার হয়ে পড়ছে। এভাবেই তাঁতশিল্প এখন ধ্বংসের পথে।
জানা গেছে, তাঁতিদের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস করার জন্য আওয়ামী দোসররা প্রশাসনে ঘাপটি মেরে আছে। তারা আমদানির প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেওয়ার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, এনবিআর ও অন্যান্য দপ্তরে এসআরও বন্ধের নির্দেশনা দেওয়ার পাঁয়তারা করছে।
এই কুচক্রী মহলের এবং আওয়ামী দোসরদের সহায়তায় তাঁতিদের এসআরও বন্ধ করার প্রক্রিয়া অবিলম্বে বন্ধ করার দাবি করছে তাঁতিরা। তাঁত বোর্ডের কতিপয় ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র বন্ধ না হলে সারাদেশের তাঁতিরা বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছে।
জাতীয় তাঁতি সমিতির সম্পাদক ফজলুল হক জানান, নতুনভাবে বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতি অনুমোদনের পর অদ্যাবধি আমাদের বাংলাদেশ জাতীয় তাঁতি সমিতি থাকাকালীন সময়ে কোন সুপারিশের মালামাল আমদানি বা বণ্টন কোন কিছুই প্রদান করেন নাই।
শুধু প্রক্রিয়া এবং জটিলতা সৃষ্টি করেই চলেছে এবং মাসের পর মাস মিটিং আর মিটিং চলছে। প্রায় দু’বছর আগে আমদানি সুপারিশের আমদানিকৃত মজুদ মাল যথা সময়ে বন্টন না করার কারণে মালামাল গুলোর মান নষ্ট করে ফেলছে। এতে গরীব তাঁতিরা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, গত ২৪ সালের জুন মাসে নরসিংদীর আমিরগঞ্জ ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ড প্রাথমিক তাঁতি সমিতির নামে আমদানিকৃত ২কোটি টাকার সুতা, রং রাসায়নিক তাঁতবোর্ডের লিয়াজোঁ অফিসের গাডাউনে রাখা হয়, ডিজিএম-মেম্বর সেগুলো তাঁতীদের মাঝে বন্ঠনের অনুমতি পএ না দেওয়ায় গোডাউনেই পঁচে নষ্ট হয়ে যায়।
একই ভাবে দেড় বছর আগে আমদানী সুপারিশ নেয়া মেয়াদ বৃদ্ধি করে সিরাজগঞ্জের ২টি সমিতির আমদানিকৃত মালামাল গোডাউনে পচে নষ্ট হওয়ার পথে। তা তাঁতিদের মাঝে বন্ঠনের অনুমতি দেয়া হচ্ছেনা।
তাঁতি নেতা আবদুল বাতেন বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক জারীকৃত নতুন এসআরও নং: ২০০-আইন/২০২৪/৫২/কাস্টমস, তারিখঃ ২৯.০৫.২০২৪ইং এর মাধ্যমে যে শর্তারোপ করা হয়েছে সেই শর্ত সম্পূর্ণ পরিপালন করেই তাঁতিরা মালামাল আমদানি করে আসছে।
এর বাইরে কোন নতুন শর্ত সাধারণ তাঁতিরা মানতে রাজি নয়। তিনি বলেন, অত্যন্ত সুকৌশলে বিতর্কিত তাঁত বোর্ডের কর্মকর্তাদের তাঁতি স্বার্থ বিরোধী মতামত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
অন্যান্য তাঁতী নেতারা বলেন, এই তাঁত বোর্ডে এখনও আওয়ামী দোসররা রয়ে গেছে। বিশেষ করে তাঁত বোর্ডের মেম্বার দেবাশীষ নাগ (এসএন্ডএম), রতন চন্দ্র সাহা উপমহাব্যবস্থাপক (এসসিআর) সদস্য এরা তাঁতিদের এসআরও বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে কারণে গত দেড় বছর ধরে তাঁতিরা সুতা,রং রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি করতে পারছেন না। এ জন্য চেয়ারম্যান তাঁতিদের আমদানি সুপারিশ বাস্তবায়ন করছেন না।
তাঁতি নেতাদের সঙ্গে কথা বলে আরও জানা গেছে, তারা তিন দফা দাবি আদায়ে বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তোলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
বিগত ১৯.০৯.২০২৫ তারিখের বাতাবোর বৈঠকে তাঁতিদের আমদানি সুপারিশের মালামাল বন্টনের ক্ষেত্রে ৭ সদস্য বিশিষ্ঠ মনিটরিং কমিটি গঠন করার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়।
এই কমিটিতে তাঁত বোর্ডের ৩ জন, জাতীয় তাঁতি সমিতির ২ জন, খণ্ডকালীন ১ জন ও মন্ত্রণালয়ের ১ জনকে রাখার বিষয়েও স্ধিান্ত হয়।
কিন্তু দীর্ঘ দিনেও এই কমিটি গঠন করা হয়নি। এই কমিটিটি গঠন হলে তাঁতিদের মালামাল আমদানি ও বন্টনে কোন দুর্নীতি করার সুযোগ থকতো না। এই ধরনের একটি কমিটি তাঁতিরা চাচ্ছিলেন।
তিন দফা দাবির মধ্যে রয়েছে-
১) আওয়ামী দোসর কর্মকর্তাদের দ্বারা চলমান এসআরও নং- ২০০ বন্ধের পাঁয়তারা অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড কর্তৃক মন্ত্রণালয়ে পএ প্রেরন করেছে।
২) বাংলাদেশ তাঁত বোর্ডের বিতর্কিত ডিজিএম এবং মেম্বার কর্তৃক অবৈধ হস্তক্ষেপের ফলে তাঁতিদের আমদানি সুপারিশ বন্ধের অলিখিত নির্দেশ প্রত্যাহার করে অবিলম্বে তাঁতিদের স্বার্থে সুপারিশ চালু করতে হবে।
৩) আওয়ামী দোসর হিসাবে খ্যাত তাঁত বোর্ডের মেম্বার দেবাশীষ নাগ (এসএন্ডএম), রতন চন্দ্র সাহা উপমহাব্যবস্থাপক (এসসিআর) সদস্যকে অবিলম্বে তাঁত বোর্ডের বর্তমান পদ থেকে প্রত্যাহার করার জোর দাবি জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন

