বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১২ নভেম্বর ২০২৫, ২৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

রাজস্ব সুরক্ষার পথে কাঁটা: অভিজাত শপিং মলে অবৈধ ফোন বেচাকেনা

এনপিবি প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৪৪ পিএম আপডেট : ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৮ পিএম
অভিজাত শপিং মলে অবৈধ ফোন বেচাকেনা
expand
অভিজাত শপিং মলে অবৈধ ফোন বেচাকেনা

সরকার অবৈধ মোবাইল আমদানি রোধে এবং রাজস্ব ফাঁকি বন্ধে আগামী ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (NEIR) চালুর উদ্যোগ নিচ্ছে। তবে এই উদ্যোগের সামনে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে রাজধানীর কিছু অভিজাত শপিং মলে সক্রিয় অবৈধ ফোন বিক্রেতাদের নেটওয়ার্ক।

রাজধানীর মলেই ‘গ্রে’ মার্কেটের দুর্গ

বাজার বিশ্লেষণ ও বিভিন্ন সূত্রের তথ্যে জানা গেছে, দেশের মোট মোবাইল বাজারের প্রায় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ এখনো তথাকথিত ‘গ্রে মার্কেট’-এর দখলে। এই অবৈধ বেচাকেনার মূল কেন্দ্র হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে অভিযোগের মুখে রয়েছে রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং মল।

এই অভিযোগ সত্য প্রমাণিত হলে স্পষ্ট হয়—অবৈধ হ্যান্ডসেট বাণিজ্য এখন কোনো গোপন গুদামে নয়, বরং দেশের অন্যতম অভিজাত বাণিজ্যিক কেন্দ্রেই প্রকাশ্যে চলছে। ফলে এনইআইআর বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হয়ে উঠছে এই সিন্ডিকেটগুলো।

ক্ষতিগ্রস্ত দেশীয় শিল্প ও সরকার

মোবাইল ইন্ডাস্ট্রি ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (MIOB) জানিয়েছে, স্থানীয় মোবাইল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের ৯৯ শতাংশ চাহিদা মেটাতে সক্ষম হলেও, গ্রে মার্কেটের কারণে তারা তা পূর্ণমাত্রায় করতে পারছে না। অবৈধভাবে আমদানিকৃত ফোনের সহজলভ্যতার কারণে দেশীয় উৎপাদকরা ক্রমেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।

অন্যদিকে, সরকারের জন্য ক্ষতির অঙ্ক আরও ভয়াবহ। শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়ে প্রতি বছর হাজার হাজার কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে রাষ্ট্র।

অবৈধ বাণিজ্যের আড়ালে পরিচিত ব্র্যান্ড

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বসুন্ধরা সিটি ও যমুনা ফিউচার পার্কের মতো মলগুলোর কিছু শোরুম ‘আনঅফিসিয়াল’ বা অননুমোদিত পথে আনা স্মার্টফোন বিক্রি করছে।

অ্যাপল, স্যামসাং, গুগল পিক্সেল, শাওমি, মটোরোলার মতো জনপ্রিয় ব্র্যান্ডের হাই-এন্ড মডেলগুলো বৈধ আমদানিকারকদের চেয়ে ৩০–৫০ হাজার টাকা কম দামে বিক্রি হচ্ছে। কারণ এসব ফোন আমদানিতে কোনো শুল্ক বা কর পরিশোধ করা হচ্ছে না।

রিফারবিশড ফোনে প্রতারণা

আরও উদ্বেগজনক তথ্য হলো—গ্রে মার্কেটে বিক্রি হওয়া প্রায় ৭৫ শতাংশ ফোনই ‘রিফারবিশড’, অর্থাৎ সংস্কার করা পুরোনো বা ব্যবহৃত ফোন। অধিকাংশই চীনের চোরাই বাজার থেকে আনা। এসব ফোন নতুন প্যাকেটে মোড়ানো হয় এবং একদম নতুন পণ্যের মতো ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করা হয়। ফলে ক্রেতারা নতুন ফোনের দাম পরিশোধ করেও ব্যবহৃত ফোন কিনে প্রতারিত হচ্ছেন।

এনইআইআরের সামনে চ্যালেঞ্জ

সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী, এনইআইআর কার্যকর হলে অবৈধ ফোন দেশের নেটওয়ার্কে আর সচল থাকবে না। কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, রাজধানীর বড় মলগুলোর এই সিন্ডিকেটগুলোই এখন এনইআইআরের বাস্তবায়নের সবচেয়ে বড় বাধা। সম্প্রতি মোবাইল বিজনেস কমিউনিটি বাংলাদেশ নামের একটি সংগঠন এনইআইআর চালুর বিষয়ে উদ্বেগ জানালেও, বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন—তাদের অনেকের স্বার্থই এই গ্রে মার্কেটের সঙ্গে সম্পর্কিত।

বিশেষজ্ঞদের মত

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যদি সরকার সত্যিই অবৈধ বাজার নির্মূল করতে চায়, তবে শুধু নীতিগত পদক্ষেপ নয়—বিটিআরসি ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে রাজধানীর অভিজাত শপিং মলগুলোতে সরাসরি অভিযান চালাতে হবে। কারণ সেখানেই অবৈধ ফোন বিক্রির প্রধান কেন্দ্র গড়ে উঠেছে।

তারা আরও বলেন, এনইআইআর সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে রাজস্ব আয়ে উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি আসবে এবং দেশীয় মোবাইল উৎপাদন শিল্প পুনরুজ্জীবিত হবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন