

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


শিল্পনগরী গাজীপুরে সন্ধ্যার পর রাস্তায় বের হওয়া মানেই অনিরাপদ পরিস্থিতির মুখোমুখি হওয়া। চাঁদাবাজি, ছিনতাই, অপহরণ, ধর্ষণ ও খুন—এসব যেন শহরের নিত্যনৈমিত্তিক সমস্যা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ পর্যাপ্ত তৎপরতা দেখাতে পারছে না। টহল ও চেকপোস্টের অভাবের সুযোগে অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে।
পুলিশ সদর দপ্তরের একটি সম্প্রতি প্রকাশিত তদন্ত প্রতিবেদনে গাজীপুরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ‘খুবই খারাপ’ হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে, দিনের বেলায়ও এগুলো ঘটলেও পুলিশ নীরব ভূমিকা পালন করছে।
গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) এলাকার আয়তন ৩৩০ বর্গকিলোমিটার, যেখানে প্রায় ৩৫ লাখ মানুষ বসবাস করে। শহরটি দেশের রপ্তানি ও অভ্যন্তরীণ বাজারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তবুও, সন্ধ্যা নামলেই রাস্তায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।
বর্তমানে জিএমপিতে ১,৭৬৫ জন পুলিশ সদস্য কাজ করছেন এবং মহানগরে ৮টি থানা আছে। তবুও, সাধারণ মানুষ পুলিশের কার্যক্রমে সন্তুষ্ট নয়। উদাহরণস্বরূপ, ১৯ জানুয়ারি সাংবাদিক আশরাফুল আলম টঙ্গীর কাদেরিয়া গেট এলাকায় ছিনতাইয়ের শিকার হন। একই এলাকার অন্যান্য বাসিন্দারা আরও কয়েকটি ছিনতাইয়ের ঘটনা উল্লেখ করেছেন।
১১ জুলাই রাতে টঙ্গী সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের সামনে কলেজশিক্ষার্থী মাহফুজুর রহমানকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।
পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন, গাজীপুরে ১৯টি এলাকায় সবচেয়ে বেশি ছিনতাই ঘটে। এর মধ্যে রয়েছে টঙ্গীর সান্দারপাড়া, হোন্ডা গলি, শহীদ আহসানউল্লাহ মাস্টার জেনারেল হাসপাতালের পেছনের এলাকা, মিলগেট, ন্যাশনাল টিউবস রোড, সফিউদ্দিন রোড, হোসেন মার্কেট, বাঁশপট্টি, চান্দনা চৌরাস্তা, জয়দেবপুর ও লক্ষ্মীপুরা বাজার, ভোগড়া বাইপাস এবং উড়ালসড়কের নিচের এলাকা।
সন্ধ্যায় কিশোর ও যুবক বয়সী ছিনতাইকারীরা রিকশা ও অটোরিকশা থামিয়ে টাকা ও মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নেন। বাধা দিলে ছুরিকাঘাতও করা হয়।
পুলিশের কাছে পেশাদার ছিনতাইকারীদের তালিকা থাকলেও, গাজীপুরে কে কোথায় অপরাধ করে তার বিস্তারিত তথ্য নেই।
গত ছয় মাসে (ফেব্রুয়ারি–জুলাই) ৩৪টি ছিনতাই ও দস্যুতা মামলা হয়েছে, এর আগের ছয় মাসে ২৬টি। অনেক ভুক্তভোগী মামলা করতে চায় না, তাই পুলিশের পরিসংখ্যানে প্রকৃত চিত্র দেখা যায় না।
চলতি বছরের জানুয়ারি–জুলাই পর্যন্ত ৮৬৩ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যার মধ্যে ২৪৯ জন জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
সুজনের গাজীপুর জেলা সাধারণ সম্পাদক ইফতেখার শিশির বলেন, বিচারহীনতার কারণে অপরাধীরা দমনযোগ্য নয়। রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর আগে মাদক ও গ্যাং নিয়ন্ত্রণকারী দলটির স্থান নতুন রাজনৈতিক দলের হাতে এসেছে।
জিএমপি কমিশনার নাজমুল করিম খান জানান, রাত ১২টা থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত ছিনতাইপ্রবণ এলাকায় টহল চালানো হচ্ছে, ফাঁকা গুলি ছোঁড়া হচ্ছে এবং মোটরসাইকেল টহল জোরদার করা হয়েছে। সাংবাদিক হত্যার পরও ডিবি দল ঘেরাও করে তল্লাশি চালিয়ে অপরাধীদের ধরছে।
মন্তব্য করুন
