রবিবার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
রবিবার
২৮ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

এক মাস ধরে বন্ধ ইপিআই কার্যক্রম, টিকা থেকে বঞ্চিত শিশুরা 

লালমনিরহাট প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:০০ পিএম
লালমনিরহাটে এক মাস ধরে বন্ধ ইপিআই কার্যক্রম
expand
লালমনিরহাটে এক মাস ধরে বন্ধ ইপিআই কার্যক্রম

ভ্যাক্সিন হিরো খ্যাত স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতীতে মুখ থুবড়ে পড়েছে নবজাতকসহ শিশুদের ১০টি রোগ প্রতিরোধের টিকাদান কার্যক্রম। টানা এক মাসের কর্মবিরতীতে টিকা বঞ্চিত হচ্ছে দেশের লাখো শিশু।

জানা গেছে, পলিও, হুপিং কাশি, যক্ষা, ধনুষ্টংকার, হাম, ডিপথেরিয়া, রুবেলাসহ ১০ টি মারাত্বক রোগ প্রতিরোধে জন্মের পর থেকে ১৮ মাস বয়সে নির্ধারীত সময়ে ১১টি ভ্যাক্সিন প্রদান করতে হয়। বাংলাদেশ থেকে এ ১০টি রোগ নির্মুল করতে সম্পুর্ন বিনামুল্যে এ ভ্যাক্সিন প্রদান করছে সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়। ইপিআই সম্প্রাসারিত টিকা দান কর্মসুচির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়ন করছেন স্বাস্থ্য সহকারী, সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক ও স্বাস্থ্য পরিদর্শকরা। এ জন্য প্রতিটি ইউনিয়নে ২৪টি টিকাদান কেন্দ্র রয়েছে। প্রতি মাসে গড়ে উপজেলা প্রতি ৫/৬ শত জন শিশু এসব কেন্দ্রে বিনামুল্যে ভ্যাক্সিন পেয়ে থাকে। এজন্য শিশু জন্মের পরেই টিকা কার্ড প্রদান করা হয় এবং কার্ডেই উল্লেখ থাকে কবে কবে টিকা পাবে শিশুরা। নির্ধারীত সময়ের মধ্যেই ভ্যাক্সিন নিতে হয়। ভ্যাক্সিন টিকা কার্ড ছাড়া মিলে না শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদ। ফলে জন্মনিবন্ধনেও ভাড়া পড়েছে।

ইপিআই কার্যক্রম সফল হওয়ায় একাধিবার বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক পুরুস্কারও গ্রহন করে সরকার। এ পুরুস্কার প্রাপ্তির পরে ভ্যাক্সিন হিরো হিসেবেও বেশ আলোচনায় আসেন ইপিআই কর্মসুচির মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নকারী স্বাস্থ্য সহকারীরা। আন্তর্জাতিক পুরুস্কার প্রাপ্তির সেই কার্যক্রম আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে হিরোদের কর্মবিরতীর মত কর্মসুচিতে। ফলে আগামীতে বাংলাদেশে এমন মারাত্ব ১০টি রোগের প্রার্দুভাব বাড়তে পারে বলে আশংকা করছেন সচেতন মহল।

ইপিআই সম্প্রসারন কর্মসুচির মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা উচ্চতর বেতন স্কেলের দাবিতে সারা দেশের মত লালমনিরহাট জেলায় কর্মবিরতী শুরু করেন গত ২৯ নভেম্বর থেকে। তাদের কর্মসুচি দীর্ঘ এক মাস ধরে চলমান থাকায় বন্ধ রয়েছে টিকাদান কার্যক্রম। তাদের কর্মবিরতীতে মাঠ পর্যায়ে কার্যক্রম মুখ থুবড়ে পড়লেও কর্তৃপক্ষের কোন মাথা ব্যাথা নেই।

আদিতমারীর বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ বলেন, জন্মের পরপরই শিশুকে ভ্যাক্সিন দিতে হয়। এক মাস ধরে টিকাদান কেন্দ্র বন্ধ থাকায় আমার শিশু ভ্যাক্সিন নিতে পারেনি। আমি এটা নিয়ে বেশ চিন্তায় আছি। স্বাস্থ্য সহকারীরা এক মাস ধরে কর্মবিরতী পালন করছে। তাদের দ্রুত মাঠে কার্যক্রম শুরু করতে নীতিনির্ধারনী পর্যায় থেকে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান তিনি।

বাংলাদেশ হেল্থ এসিস্ট্যান্ট এ্যাসোসিয়েশনের লালমনিরহাটের সাবেক সভাপতি সোহেল মাসুদ বলেন, একই যোগ্যতার উপ সহকারী ভুমি কর্মকর্তারা ১৮তম গ্রেড থেকে ১০ম গ্রেডে বেতন পাচ্ছেন। অথচ আমরা ভ্যাক্সিন হিরোরা আজও ১৮তম গ্রেডে রয়েছি। আমাদের পরিশ্রমে দেশ আন্তর্জাতিক পুরুস্কার পেলেও আমরা অন্ধকারেই রয়েছি।

সংগঠনটির সহ সভাপতি সহ-সভাপতি হালিমা আক্তার বলেন, রোধ বৃষ্টি ঝড় উপেক্ষা করে আগামীর বাংলাদেশ গড়তে শিশুদের সুরক্ষায় আমরা মাঠ পর্যায়ে কাজ করে আসছি। অথচ আমাদের উপযুক্ত মুল্যায়ন করা হচ্ছে না। একই যোগ্যতা নিয়ে অনেক দপ্তর উচ্চতর বেতন ভাড়া ভোগ করছেন। অথচ আমরা বঞ্চিত। সরকার আমাদের দাবি মেনে নেয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবায়ন করছে না। আমরা চাই, সরকার দ্রুত আমাদের দাবি মেনে নিলে আমরা পুনরায় কর্মক্ষেত্রে ফিরতে চাই।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার সহকারী স্বাস্থ্য পরিদর্শক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, স্বাস্থ্য সহকারীদের কর্মবিরতীর কারনে গোটা দেশে এক মাস ধরে ইপিআই কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে শিশুরা মারাত্ব ১০টি রোগের ১১টি ভ্যাক্সিন থেকে বঞ্চিত রয়েছে। জনগুরুত্বপুর্ন এ টিকাদান কার্যক্রম সচল করতে ঊর্দ্ধতন মহলের নজর দেয়া প্রয়োজন বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. আব্দুল হাকিম বলেন, ইপিআই কর্মসুচির কর্মীরা সারাদেশে উচ্চতর গ্রেডের জন্য কর্মবিরতী পালন করছে। বিষয়টি ঊর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়েছে। এ নিয়ে সভাও করা হয়েছে। তাদের কর্মবিরতী দীর্ঘ সময় হলে শিশুদের সুরক্ষায় খারাপ প্রভাব পড়তে পারে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X