

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা এক রোহিঙ্গা নাগরিক বাংলাদেশি পরিচয়ে বনবিভাগের জমি দখল করে বসতভিটা গড়ে তোলার অভিযোগ উঠেছে। অভিযুক্ত ওই রোহিঙ্গার নাম জামাল উদ্দিন হলেও বর্তমানে তিনি নিজেকে জাফর আলম নামে পরিচয় দিচ্ছেন এবং ওই নামেই বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সংগ্রহ করেছেন।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা জামাল উদ্দিন মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডু এলাকার বাসিন্দা। ২০১২ সালে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে তিনি বাংলাদেশে পালিয়ে আসেন। প্রথমে উখিয়ার কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পে এক আত্মীয়ের বাড়িতে বসবাস করলেও নানা জটিলতায় তিনি ক্যাম্পে নিবন্ধিত হতে পারেননি।
পরবর্তীতে পরিবারসহ তিনি চট্টগ্রামে চলে যান এবং দীর্ঘদিন ভাড়া বাসায় বসবাস করেন। পরে আবার উখিয়ায় ফিরে এসে কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের রেজিস্ট্রার্ড ক্যাম্প রোডের মাথায় সড়কের পাশে একটি দোকান ভাড়া নিয়ে ফার্মেসি ব্যবসা শুরু করেন।
এদিকে জামাল উদ্দিন বর্তমানে নিজেকে জাফর আলম নামে পরিচয় দিচ্ছেন। প্রতিবেদকের হাতে আসা জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী, জাফর আলম নামে তাঁর এনআইডি নম্বর ২৮৪৫০১০০৭৯। এনআইডিতে জন্মতারিখ উল্লেখ রয়েছে ৫ এপ্রিল ১৯৭২। পিতার নাম আব্দু সাফি এবং মাতার নাম গুল বাহার। ঠিকানা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে চট্টগ্রামের চকবাজার এলাকার কে.বি আমান আলী রোডের ১৫৭২ নম্বর বাসা। তবে সরেজমিনে ওই ঠিকানায় গিয়ে এমন কোনো ব্যক্তির অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি।
অভিযোগ রয়েছে, উখিয়ার হাজম রোড এলাকায় বনবিভাগের প্রায় ১৪ শতক জমিতে টিনশেডের ঘর নির্মাণ করে পরিবারসহ বসবাস করছেন জাফর আলম। বনবিভাগের উখিয়া রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান জানান, রাজাপালং ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের তুলাতুলি গ্রামের দিলশাদ বেগম নামে এক নারী স্টাম্পের মাধ্যমে ওই জমি বিক্রি করেন। স্টাম্পপত্রে জমির মূল্য দেখানো হয়েছে ৮ লাখ ৮০ হাজার টাকা। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো দাবি করছে, প্রকৃতপক্ষে জমিটি ২০ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনা হয়েছে।
রেঞ্জ কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান আরও জানান, বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে আলোচনা করে যৌথ অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে বনবিভাগের জমিটি উদ্ধার করা হবে।
অভিযুক্ত জাফর আলমের কাছে তাঁর প্রকৃত ঠিকানা জানতে চাইলে তিনি কক্সবাজারের পাহাড়তলী এলাকায় বাড়ি রয়েছে বলে দাবি করলেও সুনির্দিষ্ট অবস্থান জানাতে অস্বীকৃতি জানান। রোহিঙ্গা পরিচয়ের বিষয়ে তিনি সরাসরি স্বীকার না করলেও বলেন, তাঁর জাতীয় পরিচয়পত্র বাতিল করা হলে তাতে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।
এদিকে স্থানীয়দের দাবি, শুধু জাফর আলম নন—আরও অনেক নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার হাতেই বর্তমানে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র রয়েছে। কুতুপালং নিবন্ধিত ক্যাম্পের আব্দুর রহমান নামের এক রোহিঙ্গা নিজের সন্তানদের প্রকৃত পরিচয় গোপন করে জন্মনিবন্ধন করিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়দের অধিকার বাস্তবায়ন কমিটির সভাপতি রবিউল হোসাইন বলেন, রোহিঙ্গারা নানাভাবে বাংলাদেশি জাতীয় পরিচয়পত্র নিতে মরিয়া হয়ে উঠছে। অনেক বিত্তবান রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাইরে ভাড়া বাসায় বসবাস করছে এবং কেউ কেউ বনবিভাগের জমিও কিনে নিচ্ছে। এতে তাঁদের মধ্যে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার অনাগ্রহ তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি সরকারের কঠোরভাবে দেখা উচিত বলে তিনি মনে করেন।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত জাফর আলম মুঠোফোন ব্যবহার না করার কারনে বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে তার ব্যবসা -প্রতিষ্ঠানে গেলে পালিয়ে যায়। স্থানীয় সূত্র জানায়, উখিয়ার কুতুপালং, হাজমরোড, থাইংখালীর মরা আমগাছতলা এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে রোহিঙ্গারা বনবিভাগের জমিতে স্থায়ী আবাস গড়ে তুলেছে। সম্প্রতি র্যাব-১৫ উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে রোহিঙ্গাদের কাছে ঘর ভাড়া দেওয়া বাংলাদেশি মালিক এবং ভাড়া বাসায় বসবাসরত রোহিঙ্গাদের আটক করেছে।
মন্তব্য করুন
