

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


গৃহহীন মানুষের মুখে হাসি ফোটানোর লক্ষ্যে আশ্রয়ণ প্রকল্পের উপহারের ঘর। সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে নির্মান হওয়া প্রত্যেক ব্যারাকে রয়েছে ৫টি করে ঘর। যাতে ৫টি করে পরিবার বসবাস করতে পারবেন। বসবাসের সুবিধার জন্য ঘরের সামনে ও পেছনে রয়েছে বারান্দা, গভীর নলকূপ, টয়লেট, গোসলখানা।
আশ্রয়ণ প্রকল্পজুড়ে ব্যারাকের সামনে দেয়া হয়েছে বৈদ্যুতিক খুঁটি, যেখান থেকে প্রত্যেক ঘর পর্যন্ত গেছে বৈদ্যুতিক তার। সকল সুবিধা ও ঘর পর্যন্ত তার পৌঁছালেও গত ৪ বছর ধরে এসব ঘরে বসবাস করছে না সুবিধাভোগীরা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হরিশপুরে নির্মাণ করা হয়েছিল আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর ২২০টি ঘর। এরমধ্যে দেড় শতাধিক ঘরেই কেউ থাকে না। ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে বর্তমানে ঘরগুলো নষ্ট হচ্ছে। ফলে গত ৪ বছর ধরে কোনো কাজে আসছে না ৪ কোটি টাকায় নির্মিত এসব পাঁকা ঘর।
বসবাস না করায় ময়লা আবর্জনা ও আগাছা জন্মেছে প্রকল্প এলাকায়। বসবাসের জন্য তৈরি করা ঘরে থাকছে সাপ, পোকামাকড় ও খড়ি। নষ্ট হয়েছে সরকারি অর্থায়নের নির্মিত টয়লেট ও টিউবওয়েল। সকল নাগরিক সুবিধা থাকার পরেও ঘরে বসবাস না করার বিষয়টি জানলেও কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন৷ জানা যায়, হরিশপুর মহলদারপাড়া গ্রামে প্রায় ৩৫ বিঘা সরকারি খাস জমি উদ্ধার করে নির্মাণ করা হয় ২২০টি ঘর। যেখানে ভূমিহীন, অসহায়, দরিদ্র ও নদী ভাঙনের শিকার পরিবারগুলোকে ঘর দেয়া হয়। প্রতিটি ভূমিহীন পরিবারকে ৬ শতাংশ জমি ও একটি ঘর বরাদ্দ দেয়া হলেও সিংহভাগ ঘরই তালাবদ্ধ হয়ে পড়ে রয়েছে। বর্তমানে আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০-৬০টি পরিবার বসবাস করছেন। আরও ১৫-২০টি পরিবার মাঝেমধ্যে আসলেও নিয়মিত নয়। বাকি ঘরগুলোতে ঝুলছে তালা। বসবাস না করায় আগাছা দেখা দিয়েছে অনেক ঘরের সামনে। স্থানীয় বাসিন্দা আমজাদ হোসেন বলেন, জায়গাটি খাস ও অবৈধ দখলদারদের দখলে ছিল। সেগুলো উচ্ছেদ করে বাড়ি নির্মাণ করা হয়েছিল ৪ বছর আগে। প্রথমদিকে অনেককেই এসব ঘরে পুর্নবাসন করা হয়। প্রায় ১৫০টি পরিবার এসব ঘরে উঠে। কিন্তু ধীরে ধীরে সবাই বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছেন। কেউ থাকতে চাইছেন না। এখন ৩০-৪০টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের মধ্যে অনেকেই মাঝেমধ্যে এসে আবার চলে যায়।
৪ বছর ধরে পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন নদী ভাঙনে সব হারিয়ে নিঃস্ব রাকিব আলী। তিনি বলেন, কোনো উপায় না থাকায় আমাদেরকে বাধ্য হয়েই এখানে বসবাস করতে হচ্ছে। কিন্তু ঘরগুলো যাদেরকে দেয়া হয়েছে তাদের সবার বাড়ি থাকায় এখানে আসে না। তালা মেরে রেখে চলে গেছে। ঘরগুলোতে খড়িভর্তি করে রেখেছে। নতুন কেউ আসতে চাইলেও তাদেরকে দেয়া হয় না উঠতে। গৃহবধূ সায়েমা খাতুন বলেন, এখানে কাজের সংকট, তাই কেউ আসলেও থাকতে চায় না। তাই ঘরগুলো নির্মাণের আগে এসব ভেবেচিন্তে প্রকল্প গ্রহণ করা উচিত ছিল। এতগুলো টাকা খরচ করলেও তা কোন কাজে আসছে না৷ লোকজন বসবাস না করায় গোসলখানা, টয়লেট, টিউবওয়েল নষ্ট হতে শুরু করেছে। আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে বসবাস না করার বিষয়টি স্বীকার করলেও এনিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি জেলা প্রশাসক মো. শাহাদাত হোসেন মাসুদ ও সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফ আফজাল রাজন। চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মারুফ আফজাল রাজন বলেন, ঘর পেয়েও বসবাস না করা পরিবারের বরাদ্দ বাতিল করা হবে এবং যারা ভূমিহীন রয়েছে তাদেরকে ঘর বুঝিয়ে দেয়া হবে। জানা যায়, আশ্রয়ণ প্রকল্প-২ এর প্রত্যেক ব্যারাকের ৫টি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৯ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪০ টাকা। সে হিসেবে ২২০টি ঘর নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৪ কোটি ১১ লাখ ১৯ হাজার টাকা।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ২২ মার্চ চতুর্থ ধাপে ২৩০ পরিবারের মধ্যে জমিসহ ঘর হস্তান্তরের মাধ্যমে চাঁপাইনবাবগঞ্জকে ভূমি ও গৃহহীনমুক্ত জেলা ঘোষণা দেন, তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী। এর আগে তিন ধাপে জেলায় ৪ হাজার ৫৮৯টি বাড়ি হস্তান্তর করা হয়।
মন্তব্য করুন
