

সম্পাদকঃ মোঃ আল হাদী
৪১৬ তোপখানা রোড, শিশু কল্যাণ পরিষদ, ঢাকা, বাংলাদেশ
টেলিফোনঃ +৮৮(০২) ৫৮৩১২৯৫৮, ৫৮৩১২৮২২ফেক্সঃ ৫৮৩১২৯৮১[email protected]


রাজশাহীর পুঠিয়া উপজেলায় সরকারি কম্বল বিতরণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় বিএনপির অন্তত ১৩ জন নেতাকর্মী আহত হয়েছেন।
সোমবার (২৯ ডিসেম্বর) দুপুরে উপজেলার ধোপাপাড়া বাজার এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। আহতদের মধ্যে চারজনকে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। মাত্র ১৮টি কম্বল নিয়ে এই সংঘর্ষ বলে জানা গেছে।
আহতদের মধ্যে বর্তমানে পুঠিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন জিউপাড়া ইউনিয়ন বিএনপির সদস্য আনসার আলী (৫৪), তাঁর ছেলে সৌমিক হাসান (২৪), দেলোয়ার হাসান (২৫) ও সাব্বির হাসান (১৪)। এ ছাড়া আনসার আলীর স্ত্রী শামীমা বেগম (৪৫) আহত হয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন এবং হাসপাতালেই অবস্থান করছেন।
অন্য আহতদের মধ্যে রয়েছেন- ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন, এমরান আলী, শামীম হোসেন, ওয়ার্ড কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক রনি ইসলাম এবং বাবু, আনোয়ার, আকরাম ও হান্নান।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আনসার আলী বলেন, ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ বেগম সরকারি বরাদ্দের ১৮টি কম্বল বিতরণের দায়িত্ব পান। তিনি আনসার আলীকে ফোন করে পাঁচ থেকে ছয়জন শীতার্ত মানুষকে জাতীয় পরিচয়পত্রসহ নিয়ে আসতে বলেন। কিন্তু সেখানে গিয়ে তিনি দেখতে পান, ধোপাপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরজ আলী একাই সব কম্বল নিয়ে গেছেন। এ নিয়ে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ধোপাপাড়া বাজারে তাঁর মালিকানাধীন মার্কেটে কথা-কাটাকাটির এক পর্যায়ে আরজ আলী ও তাঁর অনুসারীরা তাঁদের ওপর হামলা চালান। এতে তিনি, তাঁর পরিবারের সদস্যসহ কয়েকজন আহত হন।
আনসার আলী আরও বলেন, ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হান্নান এ ঘটনার প্রতিবাদ করলে তাকেও মারধর করা হয়। ঘটনার পর তিনি আত্মগোপনে থাকায় হাসপাতালে আসতে পারেননি। এর আগেও আরজ আলী একাই শিশু ও মাতৃকার্ড সংগ্রহ করেছেন বলে অভিযোগ করেন আনসার আলী। এ নিয়ে এলাকায় ক্ষোভ ছিল। কম্বল বিতরণে অনিয়মের প্রতিবাদ করায় তাঁদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে তিনি দাবি করেন। হামলায় তাঁর ছেলে সৌমিকের মাথায় গুরুতর আঘাত লাগে। তাঁর নিজের হাত এবং অপর দুই ছেলের হাত-পায়ে জখম হয়।
ধোপাপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ বেগম বলেন, বর্তমানে ইউনিয়ন পরিষদের কোনো নির্বাচিত চেয়ারম্যান বা সদস্য নেই। এ কারণে উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা প্রশাসকের দায়িত্ব পালন করছেন এবং স্থানীয় পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে হচ্ছে সংশ্লিষ্টদের। তিনি বলেন, শিক্ষক হিসেবে এলাকায় প্রকৃত দরিদ্র কারা, তা নির্ধারণ করা তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। সে কারণে স্থানীয় নেতৃত্বের সহযোগিতা নেওয়া হয়। ধোপাপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরজ আলী তাঁরই ছাত্র হওয়ায় তাঁর ওপর তিনি নির্ভর করেন।
আরজ আলীকে জানানো হয়েছিল, ধোপাপাড়া ওয়ার্ডের নয়টি পাড়ায় প্রতিটি পাড়ায় দুটি করে কম্বল দেওয়ার জন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি আনতে। ফটোকপিতে স্বাক্ষর দিয়ে ১৮টি কম্বল তাঁকে দেওয়া হয়। পরে আনসার আলী এসে বলেন, শুধু আরজ আলীকে না দিয়ে অন্যদেরও যুক্ত করতে হবে। বিষয়টি আরজ আলীকে জানানো হলে তিনি কোনো সমস্যা হবে না বলে আশ্বস্ত করেন। রোববারের ওই ঘটনার পর সোমবার হঠাৎ সংঘর্ষের খবর শুনে তিনি লজ্জিত বোধ করছেন।
জিউপাড়া ইউনিয়ন যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক হায়দার আলী বলেন, কম্বল বিতরণকে কেন্দ্র করে আরজ আলী ও আনসার আলীর সমর্থকদের মধ্যে মারামারি হয়। আনসার আলী ও তাঁর ছেলেরা হাসপাতালে ভর্তি হলেও অপর পক্ষের আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
ধোপাপাড়া ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আরজ আলী বলেন, ওয়ার্ডের নয়টি পাড়ার জন্য নয়জন সমন্বয়ক নির্ধারণ করা ছিল। তিনি প্রত্যেককে দুটি করে কম্বল বুঝিয়ে দেন। সোমবার সকালে ধোপাপাড়া বাজারে চা খাওয়ার সময় কম্বল বিতরণ নিয়ে কথা ওঠে। এ সময় প্রধান শিক্ষক ফারুকনাজ বেগম ফোন করে জানান, আনসার আলী তাঁর কাছে কম্বল পাঠাতে বলেছেন। তিনি শিক্ষককে জানান, সভাপতি হিসেবে বিষয়টি তিনি দেখবেন। তখন ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি জয়নাল আবেদীন এসে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেন এবং আনসার আলীর দুই ছেলে তাঁকে কিলঘুষি মারেন। পরে তাঁর অনুসারীরা এসে পরিস্থিতি সামাল দেন। এরপর দুই পক্ষের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে তাঁর পক্ষের ওয়ার্ড বিএনপির সদস্য বেলাল হোসেন, এমরান আলী, শামীম হোসেন এবং ওয়ার্ড কৃষকদলের সাধারণ সম্পাদক রনি ইসলাম আহত হন। তাঁরা হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন।
এ বিষয়ে পুঠিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফরিদুল ইসলাম বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। এখনো কোনো পক্ষই থানায় মামলা করতে আসেনি। অভিযোগ করলে তদন্ত সাপেক্ষে এ বিষয়ে ব্যবস্থা করা হবে।
মন্তব্য করুন
