বুধবার
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
বুধবার
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ২ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

সুবর্ণচরের সেই কাচারি ঘর, যেখানে লেখা হয়েছিল ‘গোর্কি’র ত্রাণের গল্পও

আরিফ সবুজ, নোয়াখালী প্রতিনিধি
প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:৫০ এএম
সুবর্ণচরের চরবাটায় দাঁড়িয়ে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়ার সেই ঐতিহাসিক কাচারি ঘর।
expand
সুবর্ণচরের চরবাটায় দাঁড়িয়ে থাকা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়ার সেই ঐতিহাসিক কাচারি ঘর।

নোয়াখালীর সুবর্ণচরের চরবাটা গ্রামে একটি কাচারি ঘর এখনও নীরবে ইতিহাস ধরে রেখেছে। এটি একাধারে ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং ১৯৭০ সালের মহাপ্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় 'গোর্কি'-র নীরব সাক্ষী।

ষাট দশকের শেষ দিকে নির্মিত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণ ও এর নির্মাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়ার নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন স্থানীয়রা।

৬৫ বছরের পুরোনো এই কাচারি ঘরটির নির্মাতা ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া, যিনি ব্রিটিশ নেভেলে (বর্তমান নৌবাহিনী) চাকরি করতেন।১৯৭১ সালে ঘরটি হয়ে ওঠে মুক্তিযোদ্ধাদের মিলনস্থল এবং গেরিলা যুদ্ধের অন্যতম কেন্দ্র। সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি আব্দুল মালেক মিয়ার নেতৃত্বে এখান থেকেই মুক্তিযোদ্ধারা সংগঠিত হতেন।

এখান থেকে অস্ত্র, গোলাবারুদ, গ্রেনেড ও অন্যান্য সামরিক সরঞ্জাম বিতরণ করা হতো। গেরিলা যুদ্ধের কৌশলও এই স্থান থেকেই নির্ধারিত হতো।

গোর্কি ঘূর্ণিঝড়ের ত্রাণকেন্দ্র

মুক্তিযুদ্ধ ছাড়াও, ১৯৭০ সালের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড় 'গোর্কি'-র সময়ও ঘরটির ভূমিকা ছিল অবিস্মরণীয়। এটি ছিল ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও উদ্ধার কাজের মূল কেন্দ্রবিন্দু।

বিদেশি সাহায্য সংস্থাগুলো হেলিকপ্টারে করে এসে এখান থেকেই নোয়াখালী, সুবর্ণচর, হাতিয়া, সন্দ্বীপ, ভোলা ও মনপুরার দুর্গতদের জন্য জরুরি সাহায্য পৌঁছে দিত।

মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উল্লাহ (আব্দুল মালেকের জামাতা) বলেন: "এই ঘরটি শুধু আমাদের পরিবারের সম্পত্তি নয়, এটি আমাদের অঞ্চলের মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। আমার শ্বশুর এখান থেকে দু’টি বড় বিপর্যয়ের সময় মানুষকে সাহায্য করেছেন।"

স্মৃতিস্তম্ভ ও সংরক্ষণের দাবি

বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়া ১৯৯৩ সালে মারা যান। তাঁর মৃত্যুর পর থেকে তাঁর জামাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা মফিজ উল্লাহ বাড়িটি রক্ষণাবেক্ষণ করছেন।

স্থানীয় সচেতন মহল, গণমাধ্যম কর্মী ও মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের দাবি কালের সাক্ষী এই কাচারি ঘরটি অবিলম্বে সংরক্ষণ করা হোক এবং এই কীর্তিমান বীর মুক্তিযোদ্ধার নামে সুবর্ণচরে একটি স্থায়ী স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হোক।

স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আব্দুল বারী বাবলু বলেন, নতুন প্রজন্ম যেন ইতিহাস ভুলে না যায়, সেজন্য সরকারের উচিত দ্রুত এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি সংরক্ষণ করা এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক মিয়ার নামে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা।" স্থানীয়দের প্রত্যাশা, কর্তৃপক্ষ দ্রুত এই ঐতিহাসিক স্থানটির সংরক্ষণের উদ্যোগ নেবে।

google news সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

X